কলকাতা: রুক্ষ পাহাড়েও এবার ফুটল ঘাসফুল। মিরিক পুরসভায় জিতল তৃণমূল।
মিরিক পুরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্য ৬টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৪ শতাংশ। বাকি তিনটে ওয়ার্ডে জয়ী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
১৯৯৪ সালে মিরিক পুরসভায় শেষবার জেতে সিপিএম। তারপর থেকে সমতলের কোনও রাজনৈতিক দল পাহাড়ে দাপট দেখাতে পারেনি। প্রায় আড়াই দশক পর সেই মিথ ভাঙল তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাহাড়ের মানুষ মমতার সঙ্গে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন।
ট্যুইট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বারংবার আমাদের উপর আস্থা দেখানোর জন্য মা মাটি মানুষকে অভিনন্দন। আমরা সম্মানিত, আমরা কৃতজ্ঞ।...গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং, মিরিকের ভাই-বোনদের অভিনন্দন। আমাদের উপর আস্থা দেখানোর জন্য মিরিককে বিশেষ ধন্যবাদ। আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করব। বহু দশক বাদে আমরা পাহাড়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করব।...পাহাড় হাসছে।
পাহাড়ের ঢালে বাকি তিন পুরসভা অর্থাৎ কালিম্পং, কার্শিয়ং, দার্জিলিংয়েও ভালমতোই দাগ কেটেছে শাসক দল। ২৩ ওয়ার্ডের কালিম্পং পুরসভায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জিতেছে ১৮টি ওয়ার্ডে। ২টি করে ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে তৃণমূল এবং হরকাবাহাদুর ছেত্রীর দল জন আন্দোলন পার্টি।
তবে ভোট শতাংশের নিরিখে দেখলে কালিম্পং পুরসভায় তৃণমূল পেয়েছে ১৪ শতাংশ ভোট। হরকাবাহাদুর ছেত্রীর জন আন্দোলন পার্টি পেয়েছে ৩২.৫৭ শতাংশ ভোট। আর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রাপ্ত ভোটের হার ৪২.৬০ শতাংশ।
অর্থাৎ কালিম্পং পুরসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও হরকাবাহাদুর ছেত্রী জোট বেঁধে লড়লে বিমল গুরুংরা কড়া টক্কর পেতেন।
২০ ওয়ার্ডের কার্শিয়ং পুরসভায় মোর্চা জয়ী হয়েছে ১৭টি ওয়ার্ডে। তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৪ শতাংশ। তৃণমূলের দখলে ৩টি ওয়ার্ড। প্রাপ্ত ভোটের হার ৩০ শতাংশ। আর বিমল গুরুংয়ের গড় দার্জিলিং পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩১টিতে জয়ী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সেখানে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৮.৮৪ শতাংশ। ১৬.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূল জয়ী ১টি ওয়ার্ডে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, পাহাড়ে ঘাসফুল ফোটাতে কার্যত কোনও চেষ্টাই বাকি রাখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিম্পংকে আলাদা জেলা, মিরিককে আলাদা মহকুমা ঘোষণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি কিংবা অরূপ বিশ্বাসকে পাহাড়ে সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া। তারই ফল মিলল বুধবার।
পাল্টা তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে মোর্চার জোটসঙ্গী বিজেপি। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেছেন, গুরুংদের জন্য শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। রিগিং করে মিরিকে জিতেছে তৃণমূল। পাহাড়ে ওরা কিছু করতে পারেনি। জানত পারবে না। এই দু’টো একটাও থাকবে না।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীও পাহাড়ের তিন পুরসভায় তৃণমূলের হারকেই বড় করে দেখানোর চেষ্টা করেন। বলেন, ২০ জন মন্ত্রী এক মাস ধরে পাহাড়ে পড়ে। তাতেও পারল না!
প্রদেশ কংগ্রেস অধীর চৌধুরী বলেন, পাহাড়ে গুরুং আছে। জানতেন রংবাজি চলবে না। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখেছিলেন।
যদিও তৃণমূল বলছে, পাহাড়ের ফলই বলে দিচ্ছে পাহাড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে আস্থা দেখাচ্ছে। সামনেই জিটিএ নির্বাচনও। সেখানেও কি তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চার কড়া টক্কর দেখা যাবে?