কলকাতা ও মুর্শিদাবাদ: কংগ্রেসের জন্মের আগে তৈরি হয়েছিল বহরমপুর পুরসভা। কিন্তু, রাজনৈতিক ইতিহাসে এই বহরমপুর পুরসভাই এতটাই আঁটোসাঁটোভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িয়েছে, যে নাম দু’টো কার্যত সমার্থক হয়ে গিয়েছে! কংগ্রেসের ঘর ভেঙে এহেন বহরমপুর পুরসভাই এবার দখল করতে চলেছে তৃণমূল।
১৯৮৬ সাল থেকে এই পুরসভা একটানা কংগ্রেসের দখলে। কিন্তু, সেই নাড়ির সম্পর্ক এবার ছিন্ন হতে চলেছে। বহরমপুরের পুরসভাও কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে চলেছে তৃণমূল। সেইসঙ্গে অধীর চৌধুরীর কার্যত উঠোনও দখল নিতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারীরা!
অধীর গড়ের প্রধান স্তম্ভ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ আগেই হাত থেকে ফস্কে গিয়েছে। সূত্রের খবর, শনিবার বহরমপুর পুরসভার ১৭ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর শাসক দলে যোগ দেবেন। বহরমপুর পুরসভায় মোট আসন ২৮।  একজন কাউন্সিলরের মৃত্যু হওয়ায় এখন সাতাশ জন কাউন্সিলর। ম্যাজিক ফিগার ১৪। এর মধ্যে একজন তৃণমূলের। ২৬ জনই কংগ্রেসের ছিল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, এই ২৬ জনের মধ্যে ১৭ জন শনিবার তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্যও। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের কাউন্সিলর সংখ্যা ২৬ থেকে কমে দাঁড়াবে ৯। আর ম্যাজিক ফিগার ১৪ পেরিয়ে গিয়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা ১ থেকে বেড়ে হবে ১৮।
সূত্রের খবর, এর মধ্যে ১৬ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরকে ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। রাখা হয়েছে বিভিন্ন গোপন ডেরায়। শনিবার তাঁরা তৃণমূল ভবনে শাসক দলে যোগ দেবেন। আরেক জন বহরমপুরেই তৃণমূল শিবিরে যোগ দেবেন বলে সূত্রের খবর। যাঁর গড়ে তৃণমূল এভাবে থাবা বসাচ্ছে, সেই অধীর চৌধুরীর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ এবং বহরমপুর সভা দখল করতে আদা-জল খেয়ে নেমেছেন।
মুর্শিদাবাদে সাতটি পুরসভা। এর মধ্যে জঙ্গিপুর এবং জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ বামেদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেসের থেকে নিয়েছে ধুলিয়ান-বেলডাঙা। এবার বহরমপুর তৃণমূলের দখলে চলে গেলে কংগ্রেসের হাতে পড়ে থাকবে শুধু মুর্শিদাবাদ ও কান্দি পুরসভা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সবক’টির মধ্যেও বহরমপুর পুরসভার তাৎপর্য নিঃসন্দেহে আলাদা। বহরমপুর হল সাংসদ অধীর চৌধুরীর লোকসভা কেন্দ্র। তাঁর খাসতালুক। বহরমপুর পুরসভার মুখ্য উপদেষ্টার পদেও রয়েছে অধীরের নাম। বহরমপুর পুরসভা অধীরের মর্যাদা রক্ষার মতো বিষয়। ফলে সেই পুরসভা রক্ষা করতে না পারাটা অত্যন্ত বড় ধাক্কা তাঁর কাছে।