শিলিগুড়ি:একদিকে কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে নকশালবাড়িতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কোচবিহারে গিয়ে বিজেপিকে রোখার ডাক দিলেন মমতা। অন্যদিকে, নকশালবাড়ির সভা থেকে অমিত শাহ বললেন, মোদীর বিজয়রথ থামাতে পারবে না তৃণমূল। বাংলায় পদ্মফুল ফুটবেই।




রাসমেলার মাঠের সভা থেকে মমতা বলেছেন,  দয়া করে কেউ বিজেপিতে যাবেন না। এরা হিন্দু ধর্মকে বদনাম করে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত শাহর এই বাগযুদ্ধ ঘিরেই মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত রইল উত্তরবঙ্গ।

উত্তরপ্রদেশে রেকর্ড জয়ের পরই বিজেপি স্পষ্ট করে দিয়েছে, এবার তাদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ।

ভুবনেশ্বরে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে অমিত শাহ বার্তাও দেন, এখনও বিজেপির স্বর্ণযুগ আসেনি। বাংলা, কেরল, ওড়িশায় জিততে হবে।

সফর সূচিতেও অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য বাড়তি সময় বরাদ্দ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার নকশালবাড়ির সভা থেকে এর কারণ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনি বলেছেন, বাংলায় বিজেপির বিস্তার কেউ রুখতে পারবে না। ২০১৯ সালে বাংলার মানুষ তা বুঝিয়ে দেবে। এ রাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি আসন পাবে বিজেপি।

নকশালবাড়িতে বুথ কমিটির বৈঠকে অমিত শাহর সামনে বিজেপি কর্মীরা দাবি করেন, এখানে দল বহরে বাড়ছে। কিন্তু, অমিত শাহ বুঝিয়ে দেন, শুধুমাত্র দলের বৃদ্ধিতেই খুশি নন তিনি। বললেন, তৃণমূলকে না হারানো পর্যন্ত স্বস্তির শ্বাস নেওয়া যাবে না।


তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূল হিংসার রাজনীতি করছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত জয়ী হবে বিজেপি। এটা কেউ আটকাতে পারবে না। অমিত শাহ আরও বলেছেন, একটা সময় দেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ছিল বাংলা। কিন্তু এখন এই রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে। তৃণমূল সরকার সংখ্যালঘু তোষণের নীতি গ্রহণ করেছে।

তিনদিনের সফরে এ রাজ্যে এসেছেন বিজেপি সভাপতি। এদিন নকশাল বাড়িতে গিয়ে এক দলিত পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। দক্ষিণ কাটিয়াজোট গ্রামে রাজু মাহালির বাড়ির মেঝেয় বসে দুপুরের আহার সারলেন তিনি। কলাপাতায় ভাত, মুগডাল, পটল ভাজা, রুটি, পাঁপড়ভাজা খেলেন তিনি। স্থানীয় বিজেপি সমর্থক রাজু মাহালির বাড়িতে আগে থেকেই ছিল সাজো সাজো রব। আগে থেকেই ঠিক ছিল অমিত শাহ এই বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন। পেশায় রং মিস্ত্রি রাজু ও তাঁর স্ত্রী গীতা সামর্থ্যমতো নিরামিষ পদে মেনু সাজান।

মধ্যাহ্নভোজ সেরে অমিত শাহ যান কাছেই বিজেপির একমাত্র পঞ্চায়েত সদস্য সাধনা মণ্ডলের বাড়িতে।সেখানে বুথ কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছে সারদা থেকে নারদা, নোটবাতিল থেকে বেকারত্ব....নানা ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে একহাত নেন অমিত শাহ।



অমিত শাহ যখন বাংলা জয়ের ডাক দিচ্ছেন, তখন চুপ করে নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ইতিমধ্যে বামেদের ভোট বিজেপির দিকে যাওয়ার আটকাতে তিনি দলীয় কর্মীদের তৎপর হওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। মঙ্গলবার ভোটারদের উদ্দেশেও একই আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। বললেন,বিজেপিকে কেউ সমর্থন করবেন না। বিজেপি সব কেড়ে নেয়। বিজেপি দাঙ্গাবাজের দল।

অন্যদিকে, শিলিগুড়িতে দাঁড়িয়ে বাংলায় বিজেপিকে জেতানোর আহ্বান জানান অমিত শাহ।শিলিগুড়ির সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দেন অমিত শাহ। বলেছেন, তৃণমূল ভাবছে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেবে, কিন্তু বিজেপি ভয় পায় না।

পাল্টা নাম না করে মোদী-অমিত শাহ জুটিকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেছেন, বিজেপির কিছু লোক উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। মনে রাখবেন এখানে এলে দাঁত ভেঙে যাবে।

কোচবিহারে দ্বিতীয় সভা থেকে মুখমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সরকার মাটিতে পা রেখে চলে...উড়ে উড়ে চলে না।

মঙ্গলবার একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে আসছেন অমিত শাহ। সেখান থেকে তিনি কী বার্তা দেন, মমতাই বা তার কী জবাব দেন, সেদিকেই এখন সবার নজর।