কলকাতা: দিল্লিতে বিস্ফোরণের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর এবারের বাংলা সফরের কর্মসূচী বাতিল হয়েছে। ভোটমুখী বাংলায় ঠাকুরনগরেও আসার কথা ছিল বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির। মঞ্চও প্রস্তুত ছিল! নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা নিয়ে শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বার্তা দেন, সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন মতুয়ারা!


কিন্তু দিল্লিতে বিস্ফোরণের জেরে অমিত শাহর রাজ্য সফর বাতিল হতেই ভেস্তে গেল উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের সভা।

যার জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ল মতুয়াদের একাংশ। মতুয়াদের সভায় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কী বলবেন অমিত শাহ? এটাই ছিল সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, কিন্তু সভা বাতিল হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা মতুয়ারা এদিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন, ঠাকুরবাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। তাঁদের মধ্যেই একজন বলেছেন,আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চাই, উনি এলেন না।

এ নিয়েই তরজায় জড়িয়েছেন ঠাকুর বাড়ির দুই সদস্য- এক প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ও বর্তমান বিজেপি সাংসদ!

বিজেপি বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, ক্ষোভ দেখালে কিছু করার নেই। উনি নিশ্চয় আসবেন, সব বুঝিয়ে বলবেন।

অন্যদিকে, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অভিযোগ, উনি ভাঁওতা দিচ্ছেন, ওনার কিছু বলার নেই, মতুয়াদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।

অমিত শাহ না আসার জেরে মতুয়াদের একাংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই এদিন ঠাকুরনগরে যান রাজ্যে বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মকুল রায়। বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে ১ ঘণ্টা-র বেশি সময় ধরে তাঁরা বৈঠক করেন।

সূত্রের দাবি, বৈঠকের মাঝেই শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন অমিত শাহ।

জানা গেছে, অমিত শাহ বলেছেন, ঠাকুরনগরে যে সভামঞ্চ তৈরি হয়েছে, তা যেন খোলা না হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস, শিগগিরই ঠাকুরনগরে সভা করবেন।

বিজেপি সূত্রের দাবি, আগামী ৭ দিনের মধ্যেই সেই সভা হতে পারে।

মুকুল রায় বলেছেন, এই সভা হবেই। মঞ্চ ভাঙতে বারণ করেছেন। ফোনে কথা হয়েছে।

এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, অমিত শাহর  নাগরিকত্ব আইন নিয়ে  সমাধান করার কথা ছিল। এই বলে ভোট জিতেছিল। তিনি সেটা করেননি। সংসদে ৬ মাসের মধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল। এখন বলছেন করোনাভাইরাসের  সমস্যা। এভাবে সত্যের অপলাপ করা হচ্ছে।  তাঁর  অভিযোগ, মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে ভাঁওতা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বনগাঁ ও রানাঘাটের মতো মতুয়া অধ্যুষিত আসন দু’টি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের মতে, মতুয়াদের নাগরকিত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জোরদার প্রচার বিজেপিকে ডিভিডেন্ট দিয়েছিল। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন এখনও চালু না হওয়ায় অসন্তোষ দানা বেঁধেছে মতুয়াদের অন্দরে। সামনেই বিধানসভার হাইভোল্টেজ মহাযুদ্ধ।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভা আসনে মতুয়াদের প্রভাব আছে। যার মধ্যে সরাসরি ৩০টি আসনের নিয়ন্ত্রক তাঁরাই।

তাই নাগরিকত্ব ইস্যুকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আর বিজেপির দড়ি টানাটানিতে বিরাম নেই। এখন কবে অমিত শাহ ঠাকুরনগরে সভা করেন এবং সেখানে কী বার্তা দেন, সেদিকেই তাকিয়ে মতুয়ারা।