মেদিনীপুর: শুভেন্দু অধিকারীর পর এবার মেদিনীপুর শহরে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে হোর্ডিং।এদিন গান্ধী মোড়, গোলকুয়ার চক, কেরানিতলা, এলআইসি সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রাজীবের নামে হোর্ডিং দেখা যায়। কোথাও লেখা, ‘দাদার সাথি’, কোথাও আবার লেখা ‘দাদার পাশে আমরা’। সম্প্রতি একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষোভ প্রশমনে দিনকয়েক আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। সূত্রের দাবি, বৈঠকে দলের একাংশের দুর্নীতি এবং স্তাবকতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বনমন্ত্রী। বৈঠক শেষে রাজীব জানান, দল ডাকলে ফের আসবেন। জট কাটাতে ফের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাজীব বুঝিয়ে দেন আলোচনাতেই মিটবে সমস্যা।এরই মাঝে ফের মেদিনীপুরে রাজীবের সমর্থনে হোর্ডিং টাঙানোয় ফের অস্বস্তি তৃণমূল শিবিরে।


এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় রাজীবের সমর্থনে পোস্টার পড়েছিল। এ ব্যাপারে রাজীব বৈঠকের পর বলেছিলেন,   আমার প্রচারের প্রয়োজন নেই, কে পোস্টার দিয়েছে জানি না, এসব আমি সমর্থন করি না, শুভেন্দুর বিষয় ব্যক্তিগত, আমি আমার মতো।
উল্লেখ্য,  শুভেন্দু অধিকারীর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে এমনটাই দাবি। ১৮ বা ১৯ ডিসেম্বর শুভেন্দু দলবদল করতে পারেন বলে জল্পনা। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাও পাবেন শুভেন্দু।
গতকাল এক অরাজনৈতিক সভায় শুভেন্দু বলেছেন, ‘আমরা দেশমাতৃকাকে বন্দন করব। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করব, কৃষকের অধিকার ফেরাব আর মিলেমিশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই হবে আমাদের একমাত্র পথ। গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইয়ে আপনাদের সেবক শুভেন্দু অধিকারী থাকবে।’
১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহ আসছেন বাংলায়। সূত্রের খবর, সকাল ১১টায় পশ্চিম মেদিনীপুরের হবিবপুরে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন।
কাছেই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর মাসির বাড়ি পরিদর্শনেও যেতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।এরপর মেদিনীপুর স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বিজেপির নির্বাচন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন অমিত শাহ। বৈঠকের পর মেদিনীপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কর্ণগড় মন্দিরে পুজো দিতে যেতে পারেন অমিত শাহ।
ফেরার সময় এবারও আদিবাসী পরিবারের মধ্যাহ্নভোজ সারার কথা অমিত শাহ-র। এরপর সোজা মেদিনীপুর স্পোর্টস কমপ্লেক্সে কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ট মহল সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সেদিন একমঞ্চে দেখা যেতে পারে শুভেন্দু অধিকারীকে।শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের দাবি, এরই মধ্যে নন্দীগ্রামের বিধায়ক পদ থেকেও ইস্তফা দিতে পারেন তিনি।যদিও, শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলের আরেকটি সূত্রে দাবি, দিল্লি থেকে ঘুরে আসার পর মেদিনীপুরেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন শুভেন্দু।
সম্প্রতি রাজ্যের দেওয়া জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা ছেড়ে দেন শুভেন্দু। তারপর থেকে নিরাপত্তা ছাড়াই যাতায়াত করছিলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট এই নেতা ও নন্দীগ্রামের বিধায়ক। সূত্রের খবর, নন্দীগ্রামের বিধায়ককে জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
আগামী ২-১ দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।সূত্রের খবর, শুভেন্দুর নিরাপত্তায় ২৪ ঘণ্টা ৩০ জন কেন্দ্রীয় জওয়ান থাকবেন। সবসময় তাঁকে ঘিরে রাখবেন ১০ জন কমান্ডো। যেখানেই যাবেন, সেখানেই থাকবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পাইলট কার।
সিআরপিএফ-কেই শুভেন্দুর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সূত্রের দাবি।
শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর, পূর্ব মেদিনীপুর ও কলকাতায় তাঁর বাসভবনে মোতায়েন করা হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, সম্প্রতি গোয়েন্দা রিপোর্টে শুভেন্দুর ওপর হামলার আশঙ্কা থেকেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও তৃণমূল শিবিরের দাবি, সবকিছুই আগে থেকেই ঠিক ছিল।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে শুভেন্দুর সভায় গতকাল উপস্থিত ছিলেন হলদিয়া ব্লক তৃণমূল সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য সোমনাথ ভুঁইয়া। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে জেলায় শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত বিধায়ক কিংবা হলদিয়া পুরসভার কোনও তৃণমূল কাউন্সিলরকেই ওই সভায় দেখা যায়নি।