দীপক ঘোষ, কলকাতা : আগামী শুক্রবারই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে চলেছে বিজেপি। একই দিনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে তৃনমূল কংগ্রেসও। শাসক দল এক দিনেই ২৯৪ টি কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে, সেই সম্ভাবনাই উজ্জ্বল। বিজেপি শুক্রবার প্রথম দু'দফার মোট  ৬০ কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করতে চলেছে। গত দু'দিন ধরে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব টানা বৈঠকের পর তৈরি করেছে প্রথম ৪ দফার খসড়া প্রার্থী তালিকা। তালিকায় প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য নূন্যতম তিন, সর্বোচ্চ পাঁচ জনের নাম রয়েছে। সেই তালিকা নিয়ে আজ রাতেই তারা পাড়ি দিয়েছেন দিল্লির উদ্দেশ্যে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হবে প্রার্থীর নাম। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, বৈঠকের পরই সম্ভাবত শুক্রবারই ঘোষণা করা হবে প্রাথী তালিকা।


বাঁকুড়া, পুরুলিয়া,পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, প্রথম দু'দফায় এই পাঁচ জেলার সঙ্গে উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার একাংশে ভোট নেয়া হবে এই দুই দফার মধ্যেই। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে লড়াইয়ে আছেন শুভেন্দু অধিকারী। নির্বাচনে লড়বেন বলে অফিস অফ প্রফিটের জাল থেকে বেরিয়ে আসতে ইতিমধ্যে তিনি পদত্যাগ করেছেন জুট কর্পোরেশনের  চেয়ারম্যান পদ থেকে। সূত্রের খবর শুভেন্দু দাঁড়াবেন নন্দীগ্রাম থেকেই। এই কেন্দ্র থেকেই নিজের প্রার্থীদের  কথা ঘোষণা করেছেন তৃনমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং। এরপরই গুঞ্জন ওঠে কৌশল গত কারণে এই কেন্দ্র থেকে শুভেন্দুকে না দার করিয়ে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হতে পারে, নন্দীগ্রামের জন্য গেরুয়া অস্তিন থেকে বার করা হতে পারে বড় কোনও চমক।  সূত্রের খবর, শেষপর্যন্ত ঠিক হয়েছে, শুভেন্দুকেই দার করানো হবে নন্দিগ্রাম থেকে। ওই কেন্দ্রটি আব্বাসকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ইতিমধ্যে চমক দিয়ে রেখেছে সিপএম। ফলে শুভেন্দু দাঁড়ালে এই কেন্দ্র এক নজিরবিহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী হতে পারে।


প্রথম দু'দফার তালিকাতেই আছে খড়্গপুরের নাম। এই কেন্দ্র থেকে সকলকে চমকে দিয়ে ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এই কেন্দ্রে টানা দশ বার বিধানসভা ভোটে জিতে নজির সৃষ্টি করেছিলেন কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপাল। প্রথমবার ময়দানে নেমেই জ্ঞান সিংকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেন দিলীপ। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের প্রার্থী হয়ে বিধানসভা থেকে ইস্তফা দেন দিলীপ। এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ফের চমক। বিজেপির কাছ থেকে আসন ছিনিয়ে নেয় তৃনমূল। এবার এই আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় বিজেপি। এই জায়গাতেই থমকে গেছে গেরুয়া শিবির। প্রশ্ন হলো কার হাত ধরে উদ্ধার করা সম্ভব? দলের জেলা সভাপতি মনে করেন দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হলে এই আসন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। সেই অনুযায়ী নিয়ম মেনে তিনজনের নামের তালিকায় প্রথম নামটাই তিনি রেখেছেন দিলীপ ঘোষের। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে এটাই এখন চ্যালেঞ্জ। তারা খড়্গপুরের মতো হাতছাড়া হয়ে যাওয়া আসনে দিলীপকে নামিয়ে ঝুঁকি নেবেন, নাকি তার জন্য ১০০ শতাংশ নিরাপদ আসন খুঁজবেন। কারন অলিখিত ভাবে রাজ্য বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মুখকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাইছে না পদ্ম শিবির। দলের একটা বড় অংশ চাইছে এই ভোটে দিলীপ ঘোষকে স্টার ক্যাম্পেনার হিসাবে ব্যবহার করা হোক। ভোটের পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হননি । ভোটে জিতে ক্ষমতা দখলের পর উপনির্বাচনে জিতে এসেছিলেন মমতা। দিলীপের ক্ষেত্রে দল শেষপর্য্ন্ত কি সিদ্ধান্ত নেয় তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ এখন তুঙ্গে।


এই তালিকাতেই থাকতে পারে অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর নাম। গত সোমবারই তিনি যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। বিজেপি তাকে ভোটে নিরাপদ আসনে টিকিটের প্রতিশ্রুতি দিয়েই দলে টেনে এনেছে। গত লোকসভা ভোটে বাঁকুড়ায় তৃণমূলকে পর্যুদস্ত করেছে বিজেপি। সেখানে একাধিক বিধানসভা আসনকে সম্পূর্ন নিরাপদ বলে মনে করে গেরুয়া শিবির। সূত্রের খবর, সেই রকম একটি নিরাপদ আসন থেকে লড়তে আগ্রহী শ্রাবন্তী। যদিও দল চাইছে তুলনামূলক একটু কঠিন আসনকে কব্জা করতে কাজে লাগানো হোক শ্রাবন্তীর মতো সেলিব্রেটিকে। এই ভাবনা থেকেই দল নিশানা করেছে শ্যমপুকুর আসনটিকে। এই আসনে তৃণমূলের বিধায়ক শশী পাঁজা। এই আসনটি ছিনিয়ে নিতেই শ্যামপুকুর আসনটিকে নিশানা করেছে তারা। দল এই কেন্দ্রে শ্রাবন্তীকে ময়দানে নামিয়ে বাজিমাত করতে আগ্রহী। যদি তারা শ্যমপুকুরকে শ্রাবন্তীর জন্য বেছে নেন তাহলে শুক্রবার তার নাম ঘোষণা হবে না, কিন্তু বাঁকুড়া হলে শুক্রবারই প্রার্থী তালিকায়  ঘোষণা হতে পারে শ্রাবন্তীর নাম।