আশাবুল হোসেন ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, নন্দীগ্রাম: নন্দীগ্রামে গিয়ে পায়ে চোট পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রিন করিডরের মধ্য় দিয়ে কলকাতায় আনা হচ্ছে তৃণমূলনেত্রীকে। নিয়ে যাওয়া হবে এসএসকেএমে।
দিনভর মন্দিরে পুজো থেকে ধর্মানুষ্ঠান। তারপর নন্দীগ্রাম থেকে হলদিয়া গিয়ে মনোনয়ন দাখিল। তারপর নন্দীগ্রাম ফিরে আসা। আজ নন্দীগ্রামে থাকার কথা ছিল মমতার।
কিন্তু, সন্ধেয় আচমকাই আঘাত পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথায়, পায়ে ও কোমরে চোট পেয়ে নন্দীগ্রাম থেকে কলকাতায় ফিরছেন তৃণমূল নেত্রী তথা নন্দীগ্রামের প্রার্থী।
বুধবার হলদিয়ায় মনোনয়নপত্র পেশের পর নন্দীগ্রামে ফিরে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রাতে নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার ভাড়াবাড়িতে থাকার কথা ছিল তাঁর।
সন্ধেয় নন্দীগ্রামের কয়েকটি মন্দিরে যান তিনি। রানিচকের একটি মন্দির থেকে ফেরার সময় বিড়ুলিয়া বাজারে গাড়ি থেকে নামেন মুখ্যমন্ত্রী।
তখনই এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রচণ্ড ভিড় ছিল সেই সময়। অভিযোগ, ৪-৫ জন তাঁকে ধাক্কা মারে।
মাটিতে পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বাঁ পায়ে, কোমরে ও মাথায় চোট লাগে।
মমতা বলেন, ৪-৫ জন ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা মেরেছে। চক্রান্ত করে ধাক্কা মেরেছে। পা ফুলে গেছে। জ্বর চলে এসেছে।
তৃণমূলনেত্রীর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, ঘটনাস্থলে স্থানীয় পুলিশের কেউ ছিল না। তাঁর আরও অভিযোগ, চক্রান্ত করেই তাঁকে ধাক্কা মারা হয়েছে। মমতা বলেন, এটা অবশ্যই চক্রান্ত। ইচ্ছাকৃতভাবে মারা হয়।
গাড়ির সামনের আসনে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পায়ে বরফ দিয়ে শুশ্রুষা করতে দেখা যায়। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা সাধারণত, গাড়ির সামনে চালকের পাশের সিটে বসেন। কিন্তু, দেখা যায়, তিনি ব্যথার চোটে পিছনের সিটে বসেছেন।
রীতিমতো চ্যাংদোলা করে মুখ্যমন্ত্রীকে গাড়ির পিছনের আসনে শুইয়ে দেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। ক্রমশ যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় কলকাতায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জেড প্লাস নিরাপত্তা পান মুখ্যমন্ত্রী। তাও কী করে এই ঘটনা ঘটল? এদিনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠল।
যদিও, বিজেপি দাবি, সহানুভূতি আদায় করতে এসব কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহের দাবি, মিথ্যে কথা বলে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, হামলা যদি হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর যোগ্য নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের সাসপেন্ড করা উচিত। হামলাকারীদের ফাঁসি দেওয়া হোক। মুখ্য়মন্ত্রী যেখানে যান, তার ২ কিমির মধ্যে সব আটকে দেওয়া হয়। এসব তিনি সহানুভূতি আদায় করার জন্য করছেন।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা। দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন। অভিযোগ গুরুতর। তদন্ত করে খতিয়ে দেখা উচিত। তদন্ত প্রয়োজন। সকলেই জানতে চাইছেন, ঠিক কী ঘটেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগকে বিশ্বাস করতে রাজি নন অধীর চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, পুলিশমন্ত্রী বলছেন পুলিশ ছিল না। পুলিশ না থাকা অবস্থায় হামলা হল। এটা অসম্ভব। এটা নির্বাচনী গিমিক। একটা সমবেদনা আদায় করার চেষ্টা। আর বাংলার পুলিশমন্ত্রী যদি পুলিশ না পান, তাহলে বাংলার সাধারণ মানুষের কী হবে? তাহলে মমতা স্বীকার করুন যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়েছে।
নন্দীগ্রামের বাম প্রার্থী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, উনি তো নিজের কর্মীদের মধ্যেই ছিলেন। তাহলে কে তাঁকে ধাক্কা মারল? মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর আস্থা আছে।