কলকাতা: পরপর ২ দিন। ফের প্রার্থী বদলের দাবিতে হেস্টিংসে বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে ধুন্ধুমার। ক্যানিং পশ্চিম, কুলপি, মগরাহাট, মন্দিরবাজার-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান দলীয় কর্মীরা।


বিজেপি তৃতীয় ও চতুর্থ দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দিকে দিকে প্রার্থীদের নিয়ে অসন্তোষের ছবি প্রকাশ্যে আসছে। সোমবারের পর মঙ্গলবারও বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় হেস্টিংসে কলকাতায় বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে। 


ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিতেই, সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে তাঁর পুরনো আসনে প্রার্থী করেছে বিজেপি! আর তাতেই ক্ষেপে লাল সিঙ্গুরের বিজেপি কর্মীরা। রবিবার মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিজেপি পর্যবেক্ষক প্রভুরাম চৌধুরীকে ৫ ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখেন তাঁরা।


সোমবার বেলা গড়াতে বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রার্থীতালিকা নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন মুকুল রায়, শিবপ্রকাশ, অর্জুন সিং, সব্যসাচী দত্তরা। ব্যারিকেড দিয়েও ভিড় সামলাতে পুলিশকে রীতিমতো বেগ পেতে হল। 


শুধু কলকাতা নয়, বিক্ষোভের আঁচ ছিল জেলায় জেলায়। সিঙ্গুরের দলীয় প্রার্থী বদলের দাবিতে চুঁচুড়ায় বিজেপির জেলা পার্টি অফিসে তাণ্ডব চালায় বিজেপি কর্মীদের একাংশের। এবার সেই আঁচ গিয়ে পড়ল দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও।


তারকেশ্বরেও বিজেপি প্রার্থী বদলের দাবি। দলীয় প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্তকে মানতে নারাজ বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি। তা নিয়ে প্রকাশ্যে এল গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠীকোন্দল।


মগরাহাট পূর্বে চন্দন নস্করকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কিন্তু তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মানতে চায় না জয়গরের বিজেপি কর্মীদের একাংশ। মঙ্গলবার সকালে প্রার্থী বদলের দাবিতে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে মগরাহাটের গরুহাটা এলাকায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। এক কর্মী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দল করছি। কিন্তু প্রার্থী ২০১৬ হেরে যাওয়ার পর যোগাযোগ রাখেনি। আর্থিক দুর্নীতি রয়েছে। গোপন আতাত রয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে। প্রার্থী নিজে বলেন, অনেক লোক চেয়েছিল প্রার্থী হতে, কিন্তু দল নির্বাচিত করেছে আমাকে। যারা বিক্ষোভ করেছ তারা মোদিজীর নেতৃত্বে কাজ করবে। 


অন্যদিকে, বিষ্ণুপুরেরও প্রার্থী বদলের দাবিতে জেলা দলীয় অফিসের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতা কর্মীদের একাংশ। বিষ্ণুপুরে অগ্নিশ্বর নস্করকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। সম্প্রতি তিনি সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে জড়িত এক কর্মী বলেন, সদ্য অন্য দল থেকে আসা লোকদের প্রার্থী করেছে। জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। দলের লোককে ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী হয়েছে।


প্রার্থী বদলের দাবিতে হুগলির গোঘাটেও বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাগেশ্বর পাণ্ডেকে কালো পতাকা দেখালেন বিক্ষুদ্ধরা। এর জেরে দলের সাংগঠনিক সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির ওই সদস্য। গোঘাটে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক।


হুগলিতে প্রার্থী ঘোষণার আগেই বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। গতকালের পর আজ হুগলির সপ্তগ্রাম বিধানসভার ত্রিবেণীতে পার্টি অফিসের সামনে পথ অবরোধ করেন বিক্ষুদ্ধরা। আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বিক্ষুদ্ধ বিজেপি কর্মীদের দাবি, তৃণমূল থেকে আসা দেবব্রত বিশ্বাসকে সপ্তগ্রামের প্রার্থী করা যাবে না। গতকালও একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। যদিও এই কেন্দ্রে এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি নেতৃত্ব। 


বিজেপি প্রার্থী বদলের দাবি উঠল কোচবিহারের সিতাইয়ে। গতকাল এনিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীদের একাংশ। বিক্ষুদ্ধদের দাবি, বিজেপি প্রার্থী দীপক রায়কে পরিবর্তন করে অন্য প্রার্থী দিতে হবে। প্রার্থী বদল না হলে নির্দল হিসেবে দাঁড়ানোর হুমকিও দেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। 


এই বেনজির পরিস্থিতিতে অমিত শাহর সফরসূচিতে বদল ঘটে।  সোমবার রাতেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও, গভীর রাত পর্যন্ত নিউটাউনের পাঁচতারা হোটেলে বিজেপির বঙ্গ নেতৃত্ব ও বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন অমিত শাহ! শহরে তখন একইসঙ্গে হাজির বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও! সূত্রের খবর, মঙ্গলবারও এই ইস্যুতে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ ও জেপি নাড্ডা। আজ রাতে দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা তাঁদের।


প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ কীভাবে বিজেপি সামলায় সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।