অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: ডিজেলের আগুনে দামের ধাক্কায় কার্যত সঙ্কটে পরিবহণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও বেসরকারি বাস নামানোর আর্জি জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ। যদিও মালিকদের দাবি, বাস নামালে ক্ষতির বোঝা আরও বাড়বে। ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে অনড় বাসমালিকরা।


পেট্রোলের দাম বাড়তে বাড়তে লিটারে  ১০১ টাকা ছাড়িয়েছে। সেঞ্চুরি থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই ডিজেলও। রান্নার গ্যাসের দামও চড়চড়িয়ে বেড়েছে। কেরোসিনও অগ্নিমূল্য। দুধের দাম বাড়ছে।মুরগির মাংস থেকে...মাছ....ছুঁলেই আগুন।


নাজেহাল-ক্লান্ত-বীতশ্রদ্ধ সাধারণ মানুষ বোঝার চাপে নুইয়ে পড়ছে। করোনায় কারোর কাজ চলে গেছে, কেউ চাকরি বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে লড়াই করছেন।এই পরিস্থিতিতে পেটের তাগিদে রাস্তায় বেরোতেই হচ্ছে...কিন্তু বেরিয়ে আবার বাস পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য পয়লা জুলাই থেকে বাস চালানোর অনুমতি দিলেও, কার্যত হাতে গোনা বেসরকারি বাস চলছে।


মালিকদের সাফ কথা, ডিজেলের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, তাই আগের ভাড়ায় বাস নামানো সম্ভব নয়! তাঁদের বক্তব্য,গত বছর লকডাউন শুরুর সময়ে লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ছিল ৬৪ টাকা।এক বছরের মধ্যে ভাড়া না বাড়লেও, ডিজেলের দাম লিটারে বেড়েছে প্রায় ২৯ টাকা।


অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি পরিসংখ্যান দিয়ে ক্ষতির বহর তুলে ধরে রাজ্যকে চিঠিও দিয়েছে।ওই সংগঠনের দাবি, রাস্তায় বাস নামালে প্রতিদিন লোকসান অন্তত ৩ হাজার টাকা। বাসে ৫০০ যাত্রী উঠলে, টিকিট বিক্রি বাবদ আয় ৩ হাজার ৭২৫ টাকা।ডিজেল কিনতে দৈনিক খরচ ৪২০০ টাকা।কর্মীদের বেতনে চলে যায় দেড় হাজার টাকা।আনুষাঙ্গিক খরচ ১ হাজার টাকা। সংগঠনের দাবি, মিনিবাস চালাতে হলে, প্রতিদিন পকেট থেকে দিতে হবে ১ হাজার ৬৫০ টাকা। শহরের থেকে জেলায় লোকসান আরও বেশি বলে দাবি বাস মালিক সংগঠনের।  


এই পরিস্থিতিতে বাসমালিক সংগঠনগুলির কাছে, আরও একবার ভাড়া না বাড়িয়ে, বেশি সংখ্যায় বাস নামানোর আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিবহণমন্ত্রী বলেছেন,  আমি বাস সংগঠনের কাছে অনুরোধ করেছি, বাসের ভাড়া বাড়াবেন না। যাঁদের কাছে ভাড়া নিতে চাইছেন ,তাঁদের অবস্থা খারাপ, আমরাও নিরুপায়।


জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, মালিকরা বলছেন রোজ ২-৩ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আমরা কাউকে বাস নামাতে বারণ করেনি, মুশকিল এটাই অনেকে পেরে উঠছেন না, সরকারকেও বুঝতে হবে ভাড়াবৃদ্ধিই একমাত্র পথ।


সরকার ও বাস মালিকদের এই টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে দুর্দশা আরও বাড়ছে সাধারণ মানুষের।