আশাবুল হোসেন,কলকাতা: বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে মণীষীদের নিয়েও শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। এবার তার ছাপ পড়ল বাজেটেও। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫ তম জন্মদিবসে, রাজ্যে কার্যত কর্মসূচির প্রতিযোগিতায় নেমেছিল তৃণমূল এবং বিজেপি। শুক্রবার রাজ্য বাজেটে নেতাজির নামে একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা পুলিশে নেতাজি ব্যাটেলিয়ানের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। জেলায় জেলায় জয় হিন্দ ভবনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। নিউটাউনে আজাদ হিন্দ স্মারকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর যোজনা কমিশন তুলে দেন নরেন্দ্র মোদি। ১৯৩৮ সালে প্রথমবার এই আর্থিক পরিকল্পনার কথা প্রথম ভাবেন সুভাষচন্দ্র বসু। যার খসড়া তৈরি করেন মেঘনাদ সাহা। জওহরলাল নেহরুর আমলে ১৯৫০-এর ১৫ মার্চ যোজনা কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদি সরকারকে খোঁচা দিয়ে নেতাজি রাজ্য যোজনা কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ভারতবর্ষে জাতীয় পরিকল্পনার কথা প্রথম বলেছিলেন দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দুর্ভাগ্যের কথা, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যোজনা কমিশন তুলে দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে নেতাজির অবদানের কথা স্মরণে রেখে রাজ্যে একটি যোজনা কমিশন গঠন করব। এই কমিশনের নাম হবে— নেতাজি রাজ্য যোজনা কমিশন। আমি এর জন্য আগামী অর্থবর্ষে ৫ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব রাখছি।’’
পার্ক সার্কাসে স্কাইওয়াক নির্মাণের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই নেতাজির বিখ্যাত উক্তির প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘নেতাজি বলেছিলেন, তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। সেই কথার অনুকরণে বলি আপনারা আমাকে বিশ্বাস দিন আমি আপনাদের সেবা দেব।’’ ভোটের মুখে ভোট অন অ্যাকাউন্টে নেতাজির প্রসঙ্গ বারবার তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে কটাক্ষের সুর বাম-কংগ্রেসের গলায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘নেতাজিকে নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে ৷’’ অন্যদিকে বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির খোঁচায় আপনার নেতাজির কথা মনে পড়ল !’’
২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে কলকাতায় এসে এলগিন রোডে সুভাষচন্দ্র বসুর বাসভবনে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সাম্প্রতিককালে বারবার মোদি-অমিত শাহ-জেপি নাড্ডার মুখে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথ-অরবিন্দ-নেতাজির প্রসঙ্গ। এবার মুখ্যমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় নেতাজির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ। ভোটের মুখে বাঙালি আবেগ ছোঁয়ার চেষ্টা কেউ বাদ রাখছে না। শুক্রবার কার্যত বিরোধীহীন বিধানসভাতে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম-কংগ্রেস আগেই বাজেট বয়কট করেছিল। এদিন অধিবেশন শুরুর পর বিজেপিও ওয়াকআউট করে।
ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর ঢালাও ঘোষণাকে কটাক্ষ করেছে বাম-কংগ্রেস। কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘ওনাকে মিথ্যাশ্রী দেওয়া দরকার... ৷’’ সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, এটা মিথ্যার বাজেট ৷ সব মিলিয়ে কেন্দ্রের মতো রাজ্যের বাজেট নিয়েও শাসক-বিরোধী তরজা এখন তুঙ্গে।