অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: রাজ্যজুড়ে প্রায় ১ হাজার কেন্দ্রে প্রাথমিকের টেট দিলেন প্রায় আড়াই লক্ষ পরীক্ষার্থী। করোনা আবহে পরীক্ষার জন্য বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় এখন সেদিকে তাকিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা।

প্রায় ৫ বছর পর রাজ্যে হল প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের টেট। রাজ্যজুড়ে প্রায় ১ হাজার কেন্দ্রে প্রায় আড়াই লক্ষ পরীক্ষার্থী টেটে অংশ নেন। যার মধ্যে কলকাতায় ছিল ২৫টি পরীক্ষাকেন্দ্র। ২০১৭ সালের মে মাসে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁরাই এদিন পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নিয়োগ রাজ্য সরকারের হাতে। রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে। এটা যোগ্যতা অর্জনের পরীক্ষা। এরপর শূন্যপদ অনুযায়ী নিয়োগ করা হবে।’

করোনাকালে রাজ্যে প্রথম বড় কোনও নিয়োগের পরীক্ষা হল। তার জন্য বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কেন্দ্রে ঢোকার সময় পরীক্ষার্থীদের হাত স্যানিটাইজ করা হয়। থার্মাল চেকিং করার পরই তাঁদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। পরীক্ষাকেন্দ্রে নিষিদ্ধ ছিল মোবাইল ফোন ব্যবহার।

এদিকে, মুর্শিদাবাদ থেকে প্রশ্নপত্রের একটা অংশ প্রকাশ্যে আসে বলে অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু পর্ষদ সভাপতি তা খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘যে প্রশ্নপত্র লিক হয়েছে বলে বলা হচ্ছে সেটি ‘এ’ সিরিজের। এবছর ‘এ’ সিরিজের প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে না। এটা গুজব। বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সামনে বিধানসভা ভোট। রাজ্য রাজনীতিতে টেট একটা বড় হাতিয়ার বিরোধীদের। এই প্রেক্ষাপটেই এবার পরীক্ষা হল। ভোটের আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা এগোয়, এখন সেদিকে তাকিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা।

২০১৭ সালের মে মাসে রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা করে প্রাইমারি টেট হবে। কিন্তু সেই পরীক্ষা হয়নি। ওই বছর অক্টোবরে ফের টেট-এর বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার জানায়, প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় প্রশিক্ষণরত কিছু ছাত্র পরীক্ষায় বসার অনুমতি চান। তাঁদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার জন্যই এই বিজ্ঞপ্তি। তারপরেও পরীক্ষা হয়নি।

এরপর গত বছর ২৩ ডিসেম্বর আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজ্য সরকার বলে, আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রাথমিকের টেট হবে। সেই বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু পরীক্ষার্থী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আবেদনে তাঁরা বলেন, National Council for Teacher Education বা NCTE-র নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বছর টেট নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু তা হয়নি। আগেই তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে গিয়েছে, তাঁদেরও এবারের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হোক।

এরপরই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দেন, শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত শুধুমাত্র মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের আবেদপত্র অফলাইনে জমা নিতে হবে। এর ফলে পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান কয়েক হাজার আবেদনকারী।