সেই চেষ্টায় কসুর করেনি স্বামী উজ্জ্বল রায়। অভিযোগ, স্ত্রী পিঙ্কির মুখে অ্যাসি়ড ছুড়ে পালিয়েছে সে। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটার পাল্লা সড়কে ফুলসরা মোড়ের কাছে। ভ্যানে বসেছিলেন পিঙ্কি। অভিযোগ, সাইকেল নিয়ে এসে মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালায় উজ্জ্বল। পিঙ্কি চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি। কপাল ও মুখের এক পাশ পুড়ে গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, গাড়ির ব্যাটারিতে থাকা অ্যাসিড ছুড়েছিল উজ্জ্বল।
পিঙ্কির বয়ান লিপিবদ্ধ করে সুয়ো মোটো মামলা করেছে পুলিশ। উজ্জ্বলের খোঁজে তল্লাশি চলছে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অ্যাসিড ছুড়ে কাউকে জখম করার ধারায় (৩২৬-এ) মামলা দায়ের হয়েছে।’’
বছর আড়াই আগে গাইঘাটার ঢাকুরিয়ায় স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ফুলসরা খড়ের মাঠ এলাকায় বাপের বাড়িতে এসে ওঠেন পিঙ্কি। তাঁর দুই মেয়ে। উজ্জ্বল ট্রাকের খালাসির কাজ করে। পিঙ্কি জানিয়েছেন, স্বামী নেশা করত। রোজগার তেমন ছিল না। যতটুকু টাকা আসত, উড়িয়ে দিত মদে। প্রতিবাদ করলে জুটত মারধর।
এ সব কারণেই স্বামীকে ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন বছর ছাব্বিশের পিঙ্কি। এখন নিজে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁরই রোজগারে পড়াশোনা চলছে দুই মেয়ের। বড় জন পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে, ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে।
পিঙ্কি বলেন, ‘‘আসলে আমি ভাল আছি, নিজে রোজগার করে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি, সেটা ও সহ্য করতে পারছে না। সে জন্যই আক্রমণ করল।’’ তবে এই হামলার পরেও ঘাবড়াচ্ছেন না বছর তিনি। বললেন, ‘‘নিজেই ওকে শাস্তি দেবো। যে ভাবে আমাকে যন্ত্রণা দিল, তার শোধ নেব।’’ জয়নগরের তরুণী মনীষা পৈলানের মুখও অ্যাসিডে পুড়িয়ে দিয়েছিল প্রাক্তন স্বামী। তারপরেও মনীষার লড়াই অনেককে ভরসা জোগাচ্ছে। হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রাজ্য কে নির্দেশ দিয়েছে, ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মনীষাকে। গাইঘাটার পিঙ্কির কথা শুনে মনীষা বলছেন, ‘‘মেয়েরা চিরকাল স্বামীর আশ্রয়ে থাকবে— এই বদ্ধমূল ধারণাটাই গভীর অসুখের মতো গেড়ে বসে আছে। এই ধারণাকে অতিক্রম করে একটা মেয়ে যখনই নিজেকে প্রমাণ করে ফেলে, তখনই হিংস্র হয়ে ওঠে এই ধরনের মানুষেরা। আমাকেও একই ভাবে থামাতে চেয়েছিল ওরা।’’