কলকাতা: দু’ই শিবিরেরই লক্ষ্য পঞ্চায়েত ভোট। দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে ভোট শতাংশ বহুলাংশ বাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার পর, এবার পশ্চিমবঙ্গের বিস্তৃত গ্রামাঞ্চলেও জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। তাই বেশি করে গ্রামমুখী হতে চাইছে তারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কথা থেকে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, বুধবার কলকাতায় এক দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে বুধবার স্মৃতি ইরানি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পগুলিকে গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সম্প্রতি দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল যে বিজেপিকে গ্রামে ঝাঁপাতে আরও বেশি করে উৎসাহিত করছে, তাও স্পষ্ট। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, দক্ষিণ কাঁথিতে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৮.৭৬%। কিন্তু এক বছর ঘোরার আগেই, ভোট শতাংশ ৩০.৯৭ শতাংশে নিয়ে গিয়েছে বিজেপি! একেবারে দ্বিতীয় স্থানে!
এই বিষয়টিকে উল্লেখ করে বিজেপি নেত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি বলেন, কাঁথির ফলই বলে দিচ্ছে রাজ্য সরকারের প্রতি আস্থা করছে। বিজেপির উপর আস্থা বাড়ছে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপি যে এক্কেবারে মানুষের ঘরে পৌঁছে যেতে চাইছে, তার প্রমাণ হল তাদের কর্মসূচি।
সূত্রের খবর, বিজেপির ১০ হাজার নেতা-কর্মী ঘরে ঘরে গিয়ে দলীয় কর্মসূচি। দলের লক্ষ্য, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং দীনদয়াল উপাধ্যায়ের আদর্শ সম্পর্কে মানুষকে বোঝাবে। ১৫ দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি। পঞ্চায়েত ভোটের মধ্যে দিয়েই যে বিজেপি ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিটা সেরে ফেলতে চাইছে, তা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ১৬ তারিখ ভুবনেশ্বরে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী বলেন ‘দৌড়লে আর হবে না। এ বার লং জাম্প চাই!’
এর আগে অমিত শাহ বলেন, ‘গত লোকসভা ভোটের পর বলা হতো, বিজেপি চরম উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। ২০১৭-এ উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ের পরও বলা হচ্ছে, বিজেপি এখন পৌঁছেছে চরম উচ্চতায়। এনডিএর ৩১টি শরিক দল পরের লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভোটে লড়ার সঙ্কল্প করেছে। সব রাজ্যের পঞ্চায়েত থেকে সংসদ পর্যন্ত বিজেপির দখলে এলে সেটাই হবে আসল স্বর্ণযুগ।’ এরইসঙ্গে অমিত শাহ এ-ও বলেন, এখনও বিজেপির স্বর্ণযুগ আসেনি। বাংলা, কেরল, ওড়িশায় জিততে হবে।
যদিও, তৃণমূল একে বিজেপির দিবাস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামাঞ্চলে যে উন্নয়ন করছেন, তাতেই আস্থা রাখছে সাধারণ মানুষ। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, দিবাস্বপ্ন দেখছে বিজেপি। স্বর্ণযুগ বলছেন। আশা করতেই পারেন। তামার যুগ, ব্রোঞ্জের যুগ হয়ে পেরোতে হবে। এগোতে হলে সংগ্রামের ইতিহাস দরকার।
তৃণমূলের দাবি, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরও কোচবিহার, মন্তেশ্বর, তমলুক, দক্ষিণ কাঁথির মতো একের পর এক উপ নির্বাচনে ঘাস ফুলের ঝড় থেকেই স্পষ্ট, গ্রামের ভরসা এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই আছে।
শুধু তাই নয়, লড়াই একেবারে বিরোধী নেত্রীর গড়ে পৌঁছে দিতে চাইছে বিজেপি। অন্তত দলের আগামী কর্মসূচি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির ‘বুথ চলো’ কর্মসূচির উদ্বোধন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুর থেকে করতে চলেছেন অমিত শাহ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫ তারিখ শিলিগুড়িতে বুথ চলো কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন অমিত শাহ। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবেন। ২৬ তারিখ তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুরে কয়েকজন ভোটারের বাড়ি যাবেন। ২৭ তারিখ রাজারহাটের গৌরাঙ্গপুরে কয়েক ভোটারের বাড়ি যাবেন বিজেপি সভাপতি। বিজেপি বলছে, এটা তাদের জনসংযোগ কর্মসূচি।