পুরুলিয়া: একুশ শতকের মাটিতে দাঁড়িয়েও মানসিকতায় কুসংস্কারের অন্ধকার! যখন একের পর এক দিগন্ত উন্মোচন করে চলেছে বিজ্ঞান, বিয়ে নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে পুরুলিয়ায় মা-কে বলি দেওয়ার অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার সন্ধেয় ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার বড়াবাজার থানার বামু গ্রামে। মৃতের নাম ফুলি মাহাত। বয়স ৫৫। পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে কালীপুজো এবং তন্ত্র সাধনা করতেন প্রৌঢ়ার ছেলে নারায়ণ। আপত্তি করতেন বাড়ির সবাই। এ নিয়ে প্রায়ই মা-এর সঙ্গে নারায়ণের বচসা হত।
পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ওই যুবক বিয়ে করতে চাওয়ায় মা তাঁকে তন্ত্র সাধনা ছাড়তে বলেন। অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার সন্ধ্যাতেও এই ঘরে কালীপুজো করছিলেন নারায়ণ। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সেই সময় মা এসে প্রতিবাদ করলে শুরু হয় বচসা। বচসার মধ্যেই তরোয়াল দিয়ে ওই যুবক মা-কে বলি দেন বলে অভিযোগ।
এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার পর তাঁরা নারায়ণকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত নারায়ণ মাহাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুরু হয়েছে খুনের মামলা।
শুধু পুরুলিয়ার এই ঘটনাই নয়, ভূত-পিশাচ তাড়ানোর নামে তন্ত্র-মন্ত্রের দাপট কিম্বা ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুন করার মতো ঘটনা এখনও ঘটে।
গত বছরের ১৫ অক্টোবার তমলুকের গড়কিল্লা গ্রামে পান বরজের মধ্যে বছর কুড়ির এক তরুণীর বিবস্ত্র, মুণ্ডহীন দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দেহের চারপাশে রাখা ছিল ধূপ, ধুনো, আলতা, সিঁদুর ও হোমের কাঠ। উঠে আসে তন্ত্র সাধণার তত্ত্ব।
২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর, নিউটাউনে খুন হয় সাড়ে তিন বছরের এক শিশুকন্যা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জীবিত অবস্থায় কাটা হয়েছিল তার ডান হাতের ২টি আঙুল।
কুসংস্কারের ভূত যে এখনও তাড়ানো যায়নি সব মানুষের মন থেকে, তার প্রমাণ পুরুলিয়ার বামু গ্রামের ঘটনা।