নয়াদিল্লি : আধ্যাত্মিক নেতা সদগুরুর জন্য স্বস্তির খবর। একদিন আগেই মাদ্রাজ হাইকোর্টের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন  সদগুরু জাগ্গি বাসুদেব।  আর আজ, বৃহস্পতিবার  সুপ্রিম কোর্টে মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশে  স্থগিতাদেশ জারি করল শীর্ষ আদালত। মাদ্রাজ হাইকোর্ট তামিলনাড়ু পুলিশকে  ইশা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক মামলাগুলি খতিয়ে দেখে  তদন্ত করতে বলেছিল। শীর্ষ আদালতে মামলাটি গেলে, বিচারপতি পুলিশকে একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট দাখিল করতে বলে।


 সদগুরু জাগ্গি বাসুদেবের আশ্রম ইশা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে তদন্তে আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।  সদগুরুর আশ্রমের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ ছিস। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এখন থেকে তা বন্ধ। 


আগেই মাদ্রাজ হাইকোর্ট তামিলনাডু পুলিশকে তদন্তভার দেয়। তারপরই কোয়েম্বত্তুরে সদগুরুর আশ্রম ইশা ফাউন্ডেশনে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। সেখানে পৌঁছে যায় বিরাট পুলিশ বাহিনী। প্রায় ১৫০ পুলিশ কর্মীর মধ্যে ছিলেন এডিএসপি মর্যাদার অফিসারও । এরপরই মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে  ইশা ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল। দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশে আপাতত স্বস্তি পেয়েছেন সদগুরু।  


তামিলনাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এস কামরাজ একটি মামলা করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই মাদ্রাজ হাইকোর্ট এই নির্দেশ দেয়।  অধ্যাপক কামরাজের অভিযোগ ছিল, তাঁর দুই মেয়ে গীতা এবং লতাকে সদগুরুর ইশা যোগ কেন্দ্রে থাকার জন্য মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইশা ফাউন্ডেশন তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত রাখতে দেয়নি। ইশা ফাউন্ডেশনও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা জানায় যে দুই মেয়ের কথা মামলাকারী বলছেন,তাঁদের একজনের বয়স ৪২ , আরেকজনের ৩৯। তাঁরাও সশরীরে আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরাও সে-কথাই জানান। 


বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে  দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, সম্প্রতি ইশা ফাউন্ডেশনের একজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে কঠোর POCSO আইনে একটি শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে অবশ্যই । তখন ইশা ফাউন্ডেশনের আইনজীবী মুকুল রোহাতগি বলেন, যে ঘটনার অভিযোগ সামনে এসেছে, তা আশ্রম ক্যাম্পাসে ঘটেনি।  


তামিলনাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এস কামরাজের করা মামলা প্রায় ১০ বছর ধরে চলছে। তাঁর দুই মেয়েই সশরীরে আদালতে আসেন। জানান, স্বেচ্ছায় ঈশা ফাউন্ডেশনে আছেন তাঁরা, কেউ তাঁদের জোর করেনি। তারপরও মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতিরা আরও তদন্ত করে দেখতে বলেন। পুলিশকে ইশা ফাউন্ডেশনের প্রতি ওঠা সব অভিযোগগুলি একত্রিত করার নির্দেশ দেয়। 


 বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, সদগুরু তো নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, সু্প্রতিষ্ঠিত জীবন দিয়েছেন, তিনিই অন্য মেয়েদের মাথা কামিয়ে সন্ন্যাস নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন কেন? 


এরপরই ইশা ফাউন্ডেশন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলে , শীর্ষ আদালত তদন্তে আপাতত স্থগিতাদেশ দেয়। এদিন শুনানির সময় অধ্যাপক এস কামরাজের দুই মেয়েও ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন। এদিনও তাঁরা জানান,  স্বেচ্ছাতেই আশ্রমে আছেন তাঁরা। বরং তাঁদের বাবাই গত আট বছর যাবৎ তাঁদের হয়রান করছে।  প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, করেন, 'এইভাবে ইশা ফাউন্ডেশনে পুলিশ বাহিনী ঢুকে তদন্ত করতে পারবে না। শীর্ষ আদালত একজন বিচার বিভাগীয় আধিকারিককে আশ্রম পরিদর্শন করতে এবং দুই মহিলার সঙ্গে কথা বলতে বলবে। এছাড়াও প্রধান বিচারপতি বলেন,'আমরা উভয় সন্ন্যাসিনীর সঙ্গেই আলাদ করে  চেম্বারে  কথা বলতে চাই। '


প্রধান বিচারপতি পরে আরও বলেছিলেন যে মহিলারা তাদের বলেছিলেন যে তারা যথাক্রমে 24 এবং 27 বছর বয়সে আশ্রমে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেখানে স্বেচ্ছায় বসবাস করছেন। আদালত আরও উল্লেখ করেছে যে দুই মহিলার মা আট বছর আগে একই রকম একটি আবেদন করেছিলেন।            


আরও পড়ুন : 


এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়, বললেন ডা. কুণাল সরকার