নয়াদিল্লি: প্রাক্তন বিচারক বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ মেয়ের। নাবালিকা অবস্থায় বাবা তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেই মামলায় প্রাক্তন বিচারককে রেহাই দিল না সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলার প্রক্রিয়া খারিজ করল না। গোটা ঘটনাকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে উল্লেখ করেছে শীর্ষ আদালত। (Supreme Court)

বুধবার আদালতে মামলার শুনানি করছিলেন বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি মনমোহন। বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে অভিযুক্ত আদালতে স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন দায়ের করেছিলেন। বম্বে হাইকোর্টও তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিচারপ্রক্রিয়া শুরুতে স্থগিতাদেশ দেয়নি বা তা বাতিল করেনি। সুপ্রিম কোর্টও করল না। (Former Judge Case)

অভিযুক্ত প্রাক্তন বিচারকের আইনজীবী আদালতে জানান, আদালতের বিচার প্রক্রিয়া তাঁর মক্কেলের জীবন ও কেরিয়ার নষ্ট করে দিয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্যজনিত যে দীর্ঘ অশান্তি চলছিল, তা থেকেই এই ঝামেলার সূত্রপাত বলে দাবি করেন। অভিযুক্তের আইনজীবী বলেন, “আমার মক্কেলের গোটা জীবনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, যার সূতনা ঘটে দাম্পত্যকালীন থেকে। এটা স্পষ্টতই পাল্টা আক্রমণ। ওঁর বাবা আত্মঘাতী হয়েছেন।”

কিন্তু বিচারপতিদের কাছে এই যুক্তি ধোপে টেকেনি। তাঁরা বলেন, “এসবের মধ্যে যেতে চাই না। ছেলের কর্মকাণ্ডের জেরেও আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বাবা। মেয়ে যে অভিযোগ করছেন, তা ভয়ঙ্কর। উনি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, ওঁর বিরুদ্ধে অজাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ! ভয়ঙ্কর ঘটনা। মেয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। আজীবন ক্ষতবিক্ষত হবেন উনি। এই মামলা কীভাবে খারিজ করা সম্ভব?”

অভিযুক্ত প্রাক্তন বিচারপতির আইনজীবী আদালতে জানান, কথিত ঘটনার বহু বছর পর অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হচ্ছে, অভিযুক্তের স্ত্রী ২০১৪ সাল থেকে সব জানতেন। কিন্তু ২০১৯ সালের আগে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বিবাহবিচ্ছেদ এবং গার্হস্থ্য হিংসার যে অভিযোন আনা হয়, তাতেও উল্লেখ ছিল না। কিন্তু আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, হাইকোর্টের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করা হবে না। অভিযুক্তের আবেদন খারিজ করে দিয়ে, দায়রা আদালতকে দ্রুত শুনানি শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভান্ডারায় প্রাক্তন বিচারকের বিরুদ্ধে প্রথম ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর মেয়ে। ২০১৪ সালের মে মাস থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাবা যৌন নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেই মামলায় চার্জশিট জমা পড়লেও, বিশেষ POCSO আদালতে এখনও পর্যন্ত চার্জ গঠন করা হয়নি। অভিযুক্ত প্রাক্তন বিচারকের দাবি, স্ত্রীর সঙ্গে এমনিতেই আইনি লড়াই চলছে তাঁর। মেয়ে কার কাছে থাকবে সেই নিয়েও টানাপোড়েন চলছে। তাঁর ক্ষতি করতেই কথিত ঘটনার চার বছর পর এই মামলা বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। 

অভিযুক্ত জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর বাবা আত্মঘাতী হন। সুইসাইড নোটে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে দোষারোপ করে যান। এর পর মেয়ের বয়ানও বিকৃত করা হয় বলে অভিযোগ তাঁর। POCSO আইনে তাঁর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে যে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট, তার সপক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই বলেও দাবি করেন অভিযুক্ত প্রাক্তন বিচারক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেনি। অর্থাৎ POCSO আদালতে যেতে হবে প্রাক্তন বিচারককে, বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।