নয়াদিল্লি: যৌন নিগ্রহের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অভিযোগকারিণী এবং অভিযোগকারীর আদালতের বাইরে যদি মিটমাট বা আপস করে নেন, তাতে মামলা খারিজ হবে না। নাবালিকা পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় দুই পক্ষের মিটমাট হয়ে গিয়েছে, এই যুক্তিতে ওই শিক্ষককে মুক্তি দেয় রাজস্থান হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সেই রায় খারিজ হয়ে গেল শীর্ষ আদালত। (Supreme Court)
বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন এমন নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি, হাইকোর্টে মুক্তি পেয়ে যাওয়া, অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। বিচারপতি সিটি রবিকুমার, পিবি সঞ্জয়কুমারের বেঞ্চ বলে, "হাইকোর্টের ওই অনাবশ্যক রায় খারিজ করা হল। আইন অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরপদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে। অপরাধমূলক ধারায় পদক্ষেপ করতে হবে তাঁর বিরুদ্ধে।" (Supreme Court of India)
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রাজস্থান হাইকোর্ট অভিযুক্তকে মুক্ত করে। কিন্তু দুই পক্ষ আপস করে নিয়েছে বলে যুক্তি দিয়ে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৮২ অনুচ্ছেদের আওতায় যৌন নিগ্রহের মামলা খারিজ করার অধিকার হাইকোর্টের রয়েছে কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যে মামলাটিকে ঘিরে এই টানাপোড়েন, সেটি ২০২২ সালের। অভিযুক্ত সরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষক। নাবালিকা পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে রাজস্থানের গঙ্গাপুর শহরে ওই ঘটনা ঘটে। দলিত পরিবারের এক পড়ুয়াকে তিনি যৌন নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ সামেন আসে। নির্যাতির পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের হলে মামলা দায়ের হয়। নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করা হয়। সেই সঙ্গে যৌন নির্যাতন থেকে শিশু সুরক্ষা (POCSO) এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি নির্যাতন ধারা যুক্ত করা হয় মামলায়।
১৫ বছর বয়সি ওই দলিত মেয়েটির বাবারক অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে সেই সময় অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। পরে নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন এবং অভিযুক্ত আদালতের বাইরে মিটমাট করে নেন বলা জানা যায়। এর পর রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে মামলা খারিজের আবেদন জানান অভিযুক্ত ওই শিক্ষক। 'ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, এখন মিটমাট হয়ে গিয়েছে',এই মর্মে স্ট্যাম্পপেপারে নির্যাতিতার পরিবারের লিখিতও বয়ানও আদালতে জমা দেন।
দু'পক্ষের মধ্যে মিটমাট হয়ে গিয়েছে দেখে আদালতও অভিযুক্তকে মুক্ত করে দেয়। কিন্তু হাইকোর্টের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানান তৃতীয় এক ব্যক্তি, পেশায় সমাজকর্মী। এই মামলায় তিনি কোনও ভাবেই যুক্ত নন। সচেতন নাগরিক হিসেবেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান রামজিলাল বৈরা নামের ওই ব্যক্তি। মামলায় যুক্ত নন এমন কারও আবেদন গৃহীত হবে না বলে প্রথমে জানায় আদালত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবেদন গৃহীত হয়। সেই সময়, তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এবং বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালার বেঞ্চ কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি আর বসন্তকে মামলায় সহায়তার বিশেষ দায়িত্ব দেয় শীর্ষ আদালত। সেই মামলাতেই আজ রায় দিল আদালত।