নয়াদিল্লি: নোভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং চালু হলেও তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গত মাসে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করার অভিযোগ উঠেছিল তবলিগি জামাত নেতা মৌলানা সাদ কান্দালভির বিরুদ্ধে। এবার সেই সমাবেশে যোগ দেওয়া বেশ কয়েকজনের কোভিড-১৯ এ মৃত্যু হওয়ায় কান্দালভির বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হল।
গত মাসে কেন্দ্র মারণ ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়, একসঙ্গে অনেকের জমায়েত বন্ধ করতে বলে। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করেই তবলিগ জামাতের ধর্মীয় সভার আয়োজন করেন কান্দালভি। এজন্য তাঁকে আগেই অভিযুক্ত করা হয়। নিজামুদ্দিনের স্টেশন হাউস অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে ক্রাইম ব্রাঞ্চ থানায় গত ৩১ মার্চ এফআইআর দায়ের করা ওই মৌলবির বিরুদ্ধে। এরপর তবলিগ জামাতের ধর্মীয় সভায় হাজির বেশ কয়েকজন করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে আগের দায়ের হওয়া এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ অনুচ্ছেদ (অনিচ্ছাকৃত নরহত্য়া যা খুনের পর্যায়ে পড়ে না) যোগ করা হয় বলে জানিয়েছেন জনৈক পুলিশ অফিসার। ভিসার নিয়ম লঙ্ঘন করায় জামাতের সভায় যোগদানকারী কয়েকজন বিদেশিকেও অভিযুক্ত করা হয়।
পরে জামাতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কয়েকশো সদস্য় করোনাভাইরাসপজিটিভ হওয়ায় এক অডিও বার্তায় তিনি স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে জানান কান্দালভি।
তবলিগি জামাতের ধর্মীয় সমাবেশের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা এফআইআরে বলা হয়, ২১ মার্চ দিল্লি পুলিশ নিজামুদ্দিন মারকাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি আদেশে যে ৫০ জনের বেশি লোকের জমায়েত হতে পারে, এমন কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা বলবত করা হয়েছে,তা জানিয়ে দেয়। কিন্তু তাদের লাগাতার প্রয়াস সত্ত্বেও অনুষ্ঠানের আয়োজকরা স্বাস্থ্য দপ্তর বা অন্য কোনও সরকারি এজেন্সিকে মারকাজের ভিতরে প্রচুর মানুষের থাকার কথা জানায়নি, সরকারি আদেশ জেনেশুনেই অমান্য করেছে। ডিফেন্স কলোনির সাব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অনেকবার ওই জায়গা পরিদর্শন করেন, দেখেন বিদেশি নাগরিক সহ প্রায় ১৩০০ লোক সেখানে সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে গাদাগাদি করে রয়েছে। সেখানে ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনও বন্দোবস্তও ছিল না।
পরে নিজামুদ্দিনের ওই কেন্দ্রই শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে করোনাভাইরাসের আঁতুড়ধরের পরিচিতি পায়। ২৫ হাজারের বেশি তবলিগি জামাত সদস্য, তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে বিরাট অভিযান চালিয়ে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিন করে কেন্দ্র, রাজ্য সরকারগুলি। অন্তত ৯ হাজার লোক নিজামুদ্দিনের ধর্মীয় জমায়েতে ছিল, তাদের অনেকে পরে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।