কাবুল: মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে ২০ বছরের সংঘর্ষের ইতি ঘটেছে। আমেরিকার সঙ্গে তালিবান নেতাদের 'শান্তিচুক্তি' স্বাক্ষরিত হতেই দেশ ছাড়তে শুরু করেছে মার্কিন সেনা। যার ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়েছে আফগানিস্তানে। 


মার্কিন সেনা পুরোপুরিভাবে দেশ ছাড়ার ২ সপ্তাহ আগেই আফগানিস্তান চলে গিয়েছে তালিবান জঙ্গিদের হাতে। যার ফল ভুগতে হচ্ছে আফগানিস্তানবাসীকে। প্রশ্ন উঠেছে, আফগানিস্তানে আমেরিকার ভূমিকা নিয়েও।কীভাবে মার্কিন সেনার ট্রেনিং ও সাপোর্ট পেয়েও মাত্র এক সপ্তাহে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল আফগান সেনা, তা বুঝতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। 


কী হচ্ছে আফগানিস্তানে ?


১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে তালিবান শাসনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা মনে আছে আফগানবাসীর। ফের সেই জঙ্গি গোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে আফগানিস্তানে। ২০০১ সালে এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে ক্ষমতাচ্যুত করে আফগানিস্তানে থেকে যায় মার্কিন সেনাবাহিনী। কিন্তু মার্কিন সেনা ধীরে ধীরে আফগানিস্তান ছাড়তেই ফের আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তালিবান জঙ্গিদের। ২০ বছর আফগান সরকারকে সমর্থন দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জঙ্গিদের হাতে দেশ চলে যেতেই বিমানবন্দরমুখী হয়েছে আফগানিস্তানের জনতা। দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে।


তালিবান নিয়ে কী ভাবছে দেশবাসী ?


আফগানিস্তানবাসীর ধারণা, ক্ষমতায় এসেই প্রতিশোধ তুলবে জঙ্গিরা। বেছে বেছে মার্কিন সেনা বা আফগান সরকারের সাহায্যকারীদের হত্যা করা হবে। অনেকের ধারণা, দেশে ফের ইসলামি শরিয়া আইন চালু করবে তালিবান। ১৯৯৬ সালে তাদের শাসনকালে যা আগেই করেছিল তালিবান। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছিল নারী স্বাধীনতায়। যেখানে মেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল তালিবানরা। এমনকী কাজের  জন্য কোনও মহিলার একলা বাড়ির বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ ছিল। বাইরে যেতে গেলে পুরুষদের সঙ্গেই বেরোতে হত মহিলাদের। সেক্ষেত্রেও বোরকা পরা ছিল আবশ্যিক কাজ। অতীতের তালিবান শাসনের সেই নেতিবাচক স্মৃতি ভুলতে পারছে না আফগানবাসী।


কেন তালিবানের সামনে নত হল আফগান সেনা ?


এর মূলে রয়েছে দুর্নীতি। আফগান সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে বহু অর্থ ব্যয় করেছে আমেরিকা ও সহযোগী ন্যাটো দেশগুলি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, সেই টাকা সেনাবাহিনীর কাজে ব্যবহার করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই সেনা কমান্ডাররা জওয়ানের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে টাকা লুঠ করেছে। যার ফলে তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উন্নত অস্ত্র পায়নি সেনাবাহিনী। এমনকী বহু জায়গায় সেনাবাহিনীর জন্য পর্যাপ্ত খাবার পর্যন্ত পৌঁছয়নি। পরবর্তীকালে আমেরিকা আফগানিস্তান ছাড়ার কথা বলতেই দ্রুত গতিতে বেড়ে যায় এই দুর্নীতি। এখন যার ফল ভুগতে হচ্ছে আফগানিস্তানকে।