করাচি: পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে সশস্ত্র জঙ্গি হামলা। পর পর তীব্র বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল বন্দর এলাকা। গোয়াদর বন্দরটি বালুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা রাজনৈতিক ভাবে বরাবরই উত্তপ্ত। পাক সরকার বিরোধী বিচ্ছিন্নতাকামীদের ঘাঁটি হিসেবেও ধরা হয় বালুচিস্তানকে। পাকিস্তান সরকারের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র বালুচিস্তানের পক্ষে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছেন ওই বিচ্ছিন্নতাকামীরা। (Gwadar Port Attack)
বুধবার পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর কর্তৃপক্ষের কমপ্লেক্সের ভিতর একদল সশস্ত্র জঙ্গি ঢোকার চেষ্টা করে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সেখানে তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। পর পর বিস্ফোরণ ঘটে। মাকরানের কমিশনার সইদ আহমেদ উমরানি জানিয়েছেন, জঙ্গি হামলার খবর পেতেই ওই কমপ্লেক্স ঘিরে ফেলে পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনী। দু'পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। (Balochistan Liberation Army)
গোয়াদরের সিনিয়র সুপারিটেন্ডেন্ট জোহেব মহসিন জানিয়েছেন, পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনীদের গুলিতে সাত জঙ্গি মারা গিয়েছে। গোলাগুলি বিনিময় আপাতত বন্ধ হয়েছে বলে খবর। United Nations Department for Safety And Security জানিয়েছে, পর পর বিস্ফোরণ ঘটে। তার পর শুরু হয় গুলিবর্ষণ। বন্দরের ওই জায়গায় সরকারি দফতর এবং আধা সেনাবাহিনীর দফতরও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সাত জঙ্গির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও, জঙ্গি হামলায় হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: World Happiness Report: চিন, নেপাল, পাকিস্তানও এগিয়ে, সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ, কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত?
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA)-র মজিদ ব্রিগেড। গত এক বছর ধরেই পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তানে নাশকতার ঘটনা বেড়ে চলেছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পাক সরকারের সঙ্গে তেহরিক-ই-তালিবানের শান্তিচুক্তি ভেস্তে যায়, তার পর থেকেই একের পর এক হামলার ঘটনা। এর আগে, নভেম্বর মাসে গোয়াদরেই জঙ্গি হামলায় ১৪ পাকিস্তানি সৈনিকের মৃত্যু হয়।
পাক সরকারের একটি রিপোর্টে জানানো হয়, শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসেই ৯৭টি নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানে, তাতে সবমিলিয়ে ৮৭ জন মারা গিয়েছেন, আহত হয়েছেন ১১ জন। বালুচিস্তানে হিংসা, নাশকতা আচমকা বেড়ে গিয়েছে বলেও উল্লেখ ছিল রিপোর্টে। এদিনের হামলার পর বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনীর প্রশংসা করেন। তিনি জানানস, হিংসার আশ্রয় নিলে সরকার কাউকে ক্ষমা করবে না। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম শরিফও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন।
গোয়াদর বন্দরে হামলার দায় স্বীকার করেছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA)-র যে মজিদ ব্রিগেড, ২০১১ সালে তার প্রতিষ্ঠা। গেরিলা যুদ্ধে পারদর্শী এই সংগঠনর নামকরণ হয় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর এক দেহরক্ষীর নামে, যিনি ভুট্টোকে হত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে মারা যান। আফগানিস্তানে তো বটেই ভারতেও এই সংগঠনের শাখা ছড়িয়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাকিস্তান-ইরান সীমান্তেও তাদের উপস্থিতি রয়েছে। এই মজিদ ব্রিগেড মূলত আত্মঘাতী হামলা চালায়। পাক সেনা এবং চিনের সাহায্য়প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে বেছে বেছে নিশানা করে তারা। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে করাচি ইউনিভার্সিটির কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের বাইরে যে আত্মঘাতী হামলা হয়, তারও দায় স্বীকার করেছিল মজিদ ব্রিগেড। ২০২২ সালে বালুচিস্তানের নুশকি এবং পঞ্জগুর জেলাতেও হামলা চালায় তারা।