নয়াদিল্লি: সংসদের নিরাপত্তায় ঢিলেমি নিয়ে প্রশ্ন। সেই তুলকালাম রাজ্যসভায়। স্মোক ক্যানিস্টার্স নিয়ে বুধবার লোকসভায় তাণ্ডব চালন দিই যুবক। সেই ঘটনায় বৃহস্পতিবার উত্তাল হল রাজ্যসভা। চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে তুমুল বচসায় জড়ান তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন। তাতে ডেরেককে রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করলেন ধনকড়। ডেরেকের আচরণ 'অবাধ্য' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।


বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হলে, গতকালের ঘটনা নিয়ে আলোচনার দাবি করেন ডেরেক, তাতেই সরাসরি রাজ্যসভার কক্ষ থেকে ডেরেককে বেরিয়ে যেতে বলেন ধনকড়। সেই নিয়ে তর্ক শুরু হলে ডেরেককে সাসপেন্ড করেন তিনি। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ স্বরে ডেরেককে তিরস্কার করেন। বলেন, "ডেরেক ও'ব্রায়েনকে এখনই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। ডেরেক বলেছেন, উনি চেয়ারের নির্দেশ অমান্য করবেন...বলেছেন উনি নিয়ম মানবেন না। এই আচরণ কাম্য নয়। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। এটা ওঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।" 'অবাধ্য আচরণে'র জন্য ডেরেককে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান ধনকড়।


ধনকড়ের এই নির্দেশে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্যসভার পরিস্থিতি। বিরোধী শিবিরের সাংসদরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। লোকসভার নিরাপত্তা লঙ্ঘনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জবাবদিহি করতে হবে বলে দাবি জানান।  তার জেরে শেষ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। জনকড় জানান, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। মামলাও দায়ের হয়েছে।



গতকাল অধিবেশন চলাকালীন দুই যুবক গ্যালারি থেকে লোকসভার মধ্যে লাফিয়ে নেমে আসেন। গ্যাসভর্তি স্মোক ক্যানিস্টার্স হাতে লাফিয়ে লাফিয়ে স্পিকারের দিকে ছুটে যান তাঁরা। ক্যান থেকে ছড়িয়ে দিতে থাকেন হলুদ ধোঁয়া। তাতে হুলস্থুল শুরু হয়ে যায়। দুই যুবককে নিরস্ত করতে সাংসদরাই ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার পর নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসেন। 


যে সময় লোকসভায় তাণ্ডব চলছিল, সেই সময়ই সংসদের বাইরেও এক মহিলা এবং এক যুবক একই ভঙ্গিতে হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে দিতে থাকেন। স্লোগানও দেন তাঁরা। তাঁদেরও গ্রেফতার করা হয়। সংসদভবন হামলার ২২ বছর পূর্তির দিন এই ঘটনায় তাজ্জব হয়ে যায় গোটা দেশ। সংসদের আঁটোসাটো নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে অভিযুক্তরা ভিতরে প্রবেশ করলেন কী করে, প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে লোকসভার নিরাপত্তা নিয়েও। পরে ধৃত মহিলা জানান, উচ্চশিক্ষিত হয়েও চাকরি পাননি। খেটে খাওয়া পরিবারের সন্তান তাঁরা। তাঁদের অধিকারের কথা শোনার মতো কেউ নেই। প্রতিবাদ জানাতে তাই এই উপায় বেছে নেন। 


এই ঘটনায় কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপি সাংসদের দেওয়া পাস নিয়ে ঢোকা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলেই হবে না, বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের দাবি জানান সকলে। সেই আবহে বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রীদের সঙ্গে একদফা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু সংসদে শাহ এখনও বিবৃতি দেননি। সেই নিয়েই সরব বিরোধী সাংসদরা।