নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবারও সংসদে (Monsoon Session 2023 বারবার উঠে এল বাংলার প্রসঙ্গ। সুকুমার রায়ের হয়বরলর প্রসঙ্গ এনে বিরোধীদের আক্রমণ করলেন লকেট চট্টোপাধ্যায় (BJP MP Locket Chatterjee)। অন্যদিকে মহুয়া মৈত্র (TMC MP Mahua Moitra) বললেন, 'আমরা এই অনাস্থা প্রস্তাব ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমানাধিকারকে পুনরুজ্জীবিত করতে এনেছি।'



ধুন্ধুমার তৃণমূল-বিজেপি সাংসদদের...
প্রসঙ্গ ছিল মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনা। আর সেই আলোচনাতেই বারবার উঠে এল বাংলার প্রসঙ্গ। লকেট চট্টোপাধ্য়ায়রা যখন বাংলার প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল সরকারকে তুলোধনা করলেন। তখন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর গলায় বারবার উঠে এল মোদি সরকারের প্রতি কটাক্ষ।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বললেন, 'বাংলায় সুকুমার রায়ের একটা কবিতা আছে হযবরল। একে হযবরল গাঁটবন্ধন বলে। সুকুমার রায় লিখেছিলেন রুমাল হল বিড়াল। রুমালের মানে দিল্লিতে সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল সবাই সবার হাত ধরাধরি করে থাকে। সেশনের পর যখন চলে যাবে তখন হয়ে যাবে বিড়াল। বাংলায় এরা কুস্তি করে। আজ এসে দেখছি তৃণমূলকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। ৫৯ কার্যকর্তার মৃত্যু এই পঞ্চায়েতে। ২০১১ থেকে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তখন থেকে মহিলাদের ওপর অত্যাচার।  খুদকা ইমেজ বানানে কে লিয়ে মণিপুর কো হাতিয়ার কিয়া। জিজ্ঞেস করছে প্রধানমন্ত্রী কেন চুপ।হিম্ম্ত হ্যায় তো পশ্চিমবঙ্গের জন্য বলুন, হরিয়ানার জন্য বলুন, রাজস্থানের জন্য বলুন।'

পাল্টা মহুয়ার...
জবাবে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, 'মণিপুরকে রাজস্থান, হরিয়ানার সঙ্গে তুলনা করবেন না। মণিপুরে গৃহযুদ্ধ চলছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। জিস পাপী কো গুণ নেহি, গোত্র প্যায়ারা হ্যায়...সমঝো উসনে হি হামে ইয়াহা মারা হ্যায়। ভারত আপনাদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে।  আমরা এই প্রস্তাব কোনও কিছুকে টেনে নামাতে নয়, পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এনেছি। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমানাধিকারকে পুনরুজ্জীবিত করতে এনেছি। যেটা এই সরকার ৬ ফুট নীচে কবর দিয়ে দিয়েছে।' সব মিলিয়ে টানটান বাগবিতণ্ডা।


প্রেক্ষাপট...
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ২২টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। ১৮টি যায় বিজেপির ঝুলিতে। কংগ্রেস পেয়েছিল ২টি আসন। ইতিমধ্যেই সামনের বছর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য় বিজেপির সামনে ৩৫টি আসনের লক্ষ্য়মাত্রা বেঁধে দিয়ে গেছেন অমিত শাহ। কারণ, উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ইতিমধ্য়েই সর্বোচ্চ উচ্চতা পৌঁছে গেছে তারা। তাই এখন তাদের লক্ষ্য় বাংলায় আরও বেশি করে আধিপত্য় বিস্তার। অন্য়দিকে তৃণমূলও মরিয়া হয়ে চাইছে তাদের আসন সংখ্য়া বাড়াতে। কংগ্রেসের লক্ষ্য় যেমন দুটি আসন ধরে রাখা, তেমনই সিপিএমের আশা শূন্য় হয়ে যাওয়া বাংলা থেকে ফের খাতা খোলা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলায় সিপিএম তৃণমূল জোট অসম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হল, শেষ অবধি কি বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি হবেন অধীর চৌধুরীরা? না কি সিপিএমের সঙ্গে জোট বেধে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়বে কংগ্রেস? এই নিয়ে লোকসভায় তৃণমূল নেতার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বাংলায় কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেটা নিয়ে মমতা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ১০০ শতাংশ আসনে রফা না হয়ে যদি ৭৫ শতাংশ আসনেও হয়, তাহলে ঠিক আছে।' তৃণমূল-কংগ্রেস ও সিপিএম ৩ দলই অনেকাংশে নির্ভরশীল মুসলিম ভোটের ওপর। তাই লোকসভা নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস জোট বেধে লড়লে সংখ্য়ালঘু ভোট যদি তাদের দিকে চলে যায়, তাহলে কি ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে তৃণমূলকে? সেক্ষেত্রে কি আগামী দিনে INDIA জোটে থাকা নিয়ে অন্য় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়?  এই সব প্রশ্নের উত্তরের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে ২০২৪-এ বাংলায় কী হবে তার ভাগ্য়।


আরও পড়ুন:অভব্য আচরণ, লোকসভা থেকে সাসপেন্ড অধীর, জরুরি বৈঠক ডাকলেন সনিয়া