নয়াদিল্লি: অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ তৃণমূলের। মণিপুর হিংসা নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করল জোড়াফুল শিবির (No Confidence Motion)। বিজেপি-র মধ্যে কোনও সহানুভূতি নেই, তাই বাংলায় বার বার প্রতিনিধি দল পাঠানো হলেও, মণিপুরে তাদের কেউ যায়নি বলে অভিযোগ করে তৃণমূল (TMC)।
মঙ্গলবার লোকসভায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের তরফে বক্তৃতা করেন সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Ray)। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেন তিনি। তিন মাসের বেশি সময় ধরে মণিপুরে হিংসা চলছে। এখনও পর্যন্ত ১৭০-এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন, ৬০ হাজার ঘরছাড়া। সেই নিয়ে মোদিকে নিশানা করে সৌগত বলেন, "মে থেকে জুলাই কী করছিলেন মোদি? মণিপুর জ্বলছিল, আর উনি সাতটি দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, মিশর এবং পাপুয়া গিনি গিয়েছেন।"
মোদিকে নিশানা করে সৌগত আরও বলেন, "জো বাইডেন প্রাইভেট ডিনারে ডেকেছিলেন বলে গর্বে ফুলে উঠেছিলেন মোদি, ঠিক সাহেব পিঠ চাপড়ে দিলে যেমন হয়। মণিপুরে আমাদের মা-বোনেদের ইজ্জত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আর উনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই আমাদের প্রধানমন্ত্রী! উনি কি রাষ্ট্রদূত, নাকি ট্র্যাভেলিংল সেলসম্যান! রাজস্থানে প্রচারেও গিয়েছেন। কিন্তু মণিপুর যাওয়ার সময় হয়নি ওঁর। প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে, মণিপুর যখন জ্বলছিল, উনি দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কেন?"
আরও পড়ুন: Derek O Brien Suspended : রাজ্যসভায় তুমুল উত্তেজনা, বাকি বাদল অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড ডেরেক
মণিপুর হিংসায় নীরবতা বজায় রাখা নিয়ে আগাগোড়া মোদিকে নিশানা করে এসেছেন বিরোধীরা। এদিন সেই সুর শোনা যায় সৌগতর গলাতেও। অভিযোগ করেন যে, দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে। ভেঙে দেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। হরিয়ানাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে। সব অকেজো রাজ্যপালদের রাজ্যে রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে, নির্বাচিত সরকারগুলিকে ভাঙার জন্য। বাংলা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, দিল্লি এর উদাহরণ। সৌগত বলেন, " মোদি নিজে সংসদে আসেন না। জবাব দেন না একটি প্রশ্নেরও। এমন প্রধানমন্ত্রী কখনও দেখিনি। উনি সংসদীয় গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করেন না।"
সৌগত জানান, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই মোদির উপর। জুলিয়াস সিজারের উল্লেখ করে বলেন, "মোদিকে কম ভালবাসি না, কিন্তু দেশকে বেশি ভালবাসি। আর দেশকে ভালবাসলে, মোদির বিরোধিতা করতেই হয়।" মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা, গুজরাত হিংসা এবং বিবিসি-র তথ্যচিত্র নিয়েও কটাক্ষ করেন সৌগত।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগ করেন সৌগত। তাঁর বক্তব্য, "কিন্তু এই সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে। রাজ্যের সরকারগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলা এর ভুক্তভোগী। অমিত শাহ গিয়ে ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন। বিজেপি ৮০ আসনও পায়নি। তাতে রাজ্যের ১০০ দিনের কাজের ৭ হাজার কোটি, আবাস যোজনার ৮৪০০ কোটি টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এঁদের মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর 'গোলি মারো...' বলেছিলেন। মীনাক্ষী লেখি ইডি পাঠানোর হুমকি দেন। কিন্তু আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজ্য থেকে এসেছি। দু'বেলা মরার আগে, মরব না।" ন্যূনতম সহানুভূতি বোধ থাকলে, ছুটকো বিষয়ে রাজ্যে রাজ্যে প্রতিনিধি না পাঠিয়ে, মণিপুরে লোক পাঠাতেন মোদি বা নিজে যেতেন।