কলকাতা: শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে। তৃণমূল নয়, আমরা ‘দাদার অনুগামী’ নামে জেলায় জেলায় শুভেন্দুর ছবিসহ পোস্টার পড়ছে। তৃণমূলের ব্যানার ছাড়া একের পর এক সভা করছেন তিনি। নানা সময়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করছেন, নন্দীগ্রাম দিবসের সভায় ‘ভারতমাতা জিন্দাবাদ’ ধ্বনিও দিয়েছেন। এহেন তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীকে নিয়ে জল্পনার স্রোত বইছে রাজ্য-রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি তৃণমূলে থাকবেন? নাকি বিচ্ছেদ আসন্ন? সূত্রের দাবি, শুভেন্দু যাতে দল না ছাড়েন, সেই চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল শিবির। এরই মধ্যে তাঁর ক্ষোভ উপশমে, বরফ গলাতে দুই বর্ষীয়ান সাংসদকে শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতে শুভেন্দুর সঙ্গে এক সাংসদের বৈঠক হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। মঙ্গলবারও আরেক সাংসদের সঙ্গে শুভেন্দুর বৈঠক হতে পারে বলে সূত্রের দাবি।
শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, ভাইফোঁটার সন্ধেয় কলকাতায় রাজ্যের শাসক দলের এক বর্ষীয়ান নেতা পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য এটাই, ওই বৈঠকে কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই পরিচিত এক ব্যক্তির গাড়িতে শুভেন্দু বৈঠকে পৌঁছন। এই বৈঠক ঘিরে চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল। সূত্রের দাবি, শুভেন্দুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার সেই বৈঠকে বর্ষীয়ান সাংসদ প্রশ্ন করেন, দল ছাড়ার ভাবনা কেন আসছে? এই মুহূর্তে দল ছাড়া ঠিক হবে না। তোমার ক্ষোভের কারণ কী?
সূত্রের দাবি, শুভেন্দু বলেন, দলের রাশ যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীর হাতে ছিল, তখন কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোর যেভাবে দল চালাচ্ছেন, তা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। ওই সাংসদ বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
শুভেন্দুকে দলে ধরে রাখা নিয়ে আশাবাদী তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, পার্টির মধ্যে নানা স্তরের আলোচনা হতেই পারে, উনি তো পার্টিরই লোক, অন্য কথা তো কিছু বলেননি, কোনও নেতার নামেও আক্রমণ করতে শুনিনি, উনি পার্টিতেই আছেন, আলোচনা হতেই পারে, আমার বিশ্বাস ও পার্টিতে থাকবে।
এর আগে শুভেন্দুর কাঁথির বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর। যদিও শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। সূত্রের দাবি, শুভেন্দুর বাবা বর্ষীয়ান শিশির অধিকারীর মোবাইল ফোন থেকে শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলতে চান প্রশান্ত। অধিকারী পরিবার সূত্রে দাবি, কথা বলতে রাজি হননি শুভেন্দু। তৃণমূল সূত্রের দাবি, শুভেন্দুর মান ভাঙানোর প্রক্রিয়া চলবে। সেই প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ফল মিললে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হবে শুভেন্দুর।
এদিকে, জল্পনা জিইয়ে রেখে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আজ বলেছেন, শুভেন্দুকেই ঠিক করতে হবে, উনি কী করবেন? নাম না করে, পুরনো নেতাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেই সমীকরণে কি আছেন পরিবহণমন্ত্রীও?
বামেরা অবশ্য শুভেন্দুকে নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্যে নারাজ। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ির মন্তব্য, এখনও পর্যন্ত উনি কী করবেন, ঠিক নয়, নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি, স্পষ্ট করে বলছেন না, উনি তৃণমূলের অপশাসন, তৃণমূলের দুর্নীতি, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দল ছাড়ছেন, এমনটা নয় কিন্তু, আগে কী করেন দেখি, তারপর যা বলার বলব।
১৯ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে সমবায় ব্যাঙ্কের একটি সভায় অংশ নেবেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি কী বলেন, সেদিকে নজর রয়েছে সকলের। যদিও, শুভেন্দু শিবির সূত্রে দাবি, ওই সভায় তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য রাখার সম্ভাবনা কম।