কলকাতা: বাংলা সিনেমা জগতে নক্ষত্রপতন। চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৬ অক্টোবর থেকে দীর্ঘদিন অসম লড়াই চালালেও শেষমেশ হার মানলেন কিংবদন্তি। সৌমিত্রবাবুর প্রয়াণে শেষশ্রদ্ধা জানানোর ঢল নেমেছে।


অপর্ণা সেন বলেছেন, ওনার মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। উনি আমার পারিবারিক বন্ধু, আমি অভিভাবককে হারালাম। একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। এত সুন্দর ব্যবহার, যত বড় হলাম বন্ধু হয়ে উঠলাম। আমাকে তোমার ছবিতে নাও না, তুমি তো বড় ডিরেক্টর।'  সন্দীপ রায় জানান, পরিবারের একজনকে হারালাম
বাবা ওঁর সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করতেন।

গত বছর দেড়েকের বেশি সময় ধরে সৌমিত্রবাবুর আত্মজীবনী বানানোর কাছে তাঁর সঙ্গে একেবারে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। আবেগঘন বার্তায় পরমব্রত বলেছেন, অনেকে ওনাকে গুরু মানেন, শিক্ষক বলেন, আমার কাছেও অবশ্যই তাই, আমার নিজের একান্ত নিজের উদয়ন মাস্টার, কিন্তু সব ছাড়িয়ে উনি ছিলেন একজন পরম বন্ধু! গত দেড় বছরে বিশেষ করে, যেমন তৈরি হয়েছিল শ্ৰদ্ধা, ভালোবাসা, তেমন ই হতো ছোট খাটো মতান্তর ও, যেমন হয় বন্ধুদের।
আজ জীবনের একটা অংশ চলে গেল, বাদ হয়ে গেলো একই সঙ্গে একজন শিক্ষক, পথ প্রদর্শক এবং বন্ধু হারালে কিরকম লাগে সেটা বলার চেষ্টা করে বৃথা সে পথ এ যাবো না| কাজের কারণে হিমাচল প্রদেশে আছি, শেষ যাত্রা এ থাকতে পারছি না। এক দিকে ভালোই, এ দুঃখ নিভৃতে, নির্জনে, একান্তেই মানায়। একেবারে ব্যক্তিগত এই আঘাত, এই ক্ষতি নিয়ে ভাষার প্রকাশ করার জায়গা নেই।

রবিবার সকাল সকাল হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ চক্রবর্তী। সেখানে খবর পাওয়ার পর তিনি জানান, বাংলা সিনেমা জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। চলে গেলেন কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ওঁনার আত্মার শান্তি কামনা করি। বাংলার প্রত্যেক ঘরে ও বাঙালির হৃদয়ে আপনি চিরকাল থাকবেন।



শর্মিলা ঠাকুর জানান, দুঃখের দিন, কাছের মানুষকে হারালাম। ভাবছিলাম ঠিক হয়ে যাবেন। পুরোনো বন্ধুকে হারালাম। সৌমিত্রর মতো আর কে আছে এখন? আমি ওনার কাছে অনেক শিখেছি। অনেক বিষয়ে কথা বলতেন, শুনেছি, কেন তখন রেকর্ড করলাম না?'  সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, সৌমিত্র মরতে পারে না।
ও বেঁচে থাকবে ওঁর কার্যকলাপের মধ্যে, হাসির মধ্যে।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছোট্ট মনখারাপ করা বার্তা,  ভালো থেকো। একই বার্তা দিয়েছেন মিমি চক্রবর্তীও।



ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় জানান, মানুষ সৌমিত্র সহজ, সরল , আড্ডাবাজ। দীপঙ্কর দে বলেছেন, ওনার লেখা কবিতা যত্ন করে রেখে দিয়েছি। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় লেখেন, এই বছরটা একে একে সব কেড়ে নিচ্ছে। অভিভাবক, কিংবদন্তি, ছোটবেলা, নস্টালজিয়া, সব, সব কিছু। কী নিষ্ঠুর বছরটা।



বলিউড অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী বলেছেন, বিরাট ক্ষতি। স্যর আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি। ভারতীয় সিনেমা জগতে আপনার অবদান চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর আপনি প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। পরিচালক মধুর ভাণ্ডারকার লেখেন, পদ্মভূষণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ। কম কথা বললেও ওঁনার গলায় সবসময় পাওয়া যেত কাছে টানার অনুভূতি। বরাবর অনুপ্রেরণা জোগাতেন, উৎসাহ দিতেন। ওঁনার পরিবার ও অনুরাগীদের জন্য সমবেদনা রইল।



অভিনেতা তথা সাংসদ দেব লেখেন, তুমি যেখানেই থেকো ভালো থেকো, তোমাকে খুব মিস করবো ছানা দাদু। রুক্মিণী শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে লিখেছেন, কিংবদন্তির চলে যাওয়ার অপূরণীয় এক ক্ষতি হল। এক যুগের অবসান। এক প্রতিষ্ঠানে ইতি পড়লেও রয়ে গেল তাঁর লড়াকু মেজাজ। সৌমিত্র স্যর আপনার কাজ ভরসা জুগিয়েছে, যেখানেই থাকুন না কেন সবসময় নজর রাখবেন। আপনাকে কেউ কোনওদিন ভুলতে পারবে না। সশরীরে না থাকলেও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন আপনি।



কৌশিক সেন বলেছেন, পেশাদার অভিনেতা হওয়াই হত না সৌমিত্র বাবু না থাকলে। স্টার থিয়েটার ঘটকবিদায়। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় জানান, বন্ধুর মতো হয়ে গেছিলাম, একসঙ্গে হাসি, ঠাট্টা, আড্ডা, শ্যুটিংয়ের মাঝে লিখতেন,হয়তো জীবনের কথাই লিখতেন। মাঝে মাঝে পড়ে শোনাতেন, সেটা একটা অভিজ্ঞতা। দেবশঙ্কর হালদারের কথায়, ওর সঙ্গে অভিনয় অন্য অভিজ্ঞতা। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত লিখেছেন, নক্ষত্রপতন। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি এমন একজন কিংবদন্তির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে। সৌমিত্র জেঠু আর নেই এই কঠোর সত্যটা বিশ্বাস করতে পারছি না। ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না কষ্টটা। আপনাকে সবসময় মিস করব। ভালো থাকবেন।