কলকাতা: মালদা থেকে হুগলি, বিধানসভা ভোটের আগে জেলায় জেলায় শক্তিক্ষয় তৃণমূলের। শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়ার পরই, মালদা, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলিতে তৃণমূলে বড়সড় ভাঙন।


দল ও পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ডানকুনি পুরসভার প্রাক্তন উপ পুরপ্রধান দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। যিনি শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অন্যদিকে, গোয়ালতোড়ে তৃণমূল ছাড়লেন শতাধিক কর্মী। নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের কিষাণ খেতমজুর সেলের জেলা সভাপতি। ইস্তফা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের আরও দুই বিদায়ী কাউন্সিলর।


পদত্যাগী তৃণমূল নেতার দাবি, শুভেন্দু অধিকারীকে সমর্থন জানাতেই দলত্যাগের সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি, পিকের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। এদিকে তৃণমূল নেতার দলত্যাগের পরই, বৃহস্পতিবার বিকেলে, ডানকুনি পুরসভার কোঅর্ডিনেটরদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি।


পাশাপাশি, শুভেন্দুর প্রতি সমর্থন জানিয়ে, পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে তৃণমূল ছাড়লেন শতাধিক কর্মী। নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের কিষাণ খেতমজুর সেলের জেলা সভাপতি দুলাল মণ্ডল। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর বাড়িতে বৈঠক করেন তৃণমূলের বিদ্রোহী নেতা, কর্মীরা। এরপরই শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দল থেকে ইস্তফা দেন তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের নেতা। তবে ভাঙন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি।


তবে শুধু হুগলি বা পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, শুভেন্দুর দল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মালদা জেলা তৃণমূলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাঁচ অঞ্চল সভাপতি ও এক কার্যকরী অঞ্চল সভাপতির ইস্তফা দিয়েছেন। দল ছাড়লেন হরিশ্চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য।


এক সময় মালদার পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করতেই, মালদা জেলা তৃণমূলে ব্যাপক ভাঙন। মালদার বামনগোলা ব্লকে তৃণমূলের ৬টি অঞ্চল। তার মধ্যে ৫টি অঞ্চলের সভাপতিই পদত্যাগ করেছেন। পদ ছেড়েছেন জগদলার অঞ্চল সভাপতি নায়ারণচন্দ্র মণ্ডল। পাকুয়াহাটের শ্যামল মণ্ডল। চাঁদপুরের সাহেব হাঁসদা। গোবিন্দপুর-গয়েশপুরের মানিক মাহাতো ও বামনগোলার অঞ্চল সভাপতি সফিউর রহমান। এছাড়াও পদত্যাগ করেছেন, বামনগোলা অঞ্চলের কার্যকরী সভাপতি মোস্তাফিজুর সরকার। এঁরা সকলে পদ ছাড়লেও এখনও দলের সদস্যপদ ছাড়েননি। কিন্তু, তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।


হরিশ্চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়।একই সঙ্গে তৃণমূল ও পঞ্চায়েত, দুইয়েরই সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু ঘনিষ্ট এই নেতা। প্রত্যেকেই ক্ষোভের কারণ হিসেবে দলের নেতাদের দায়ী করেছেন। পদত্যাগী তৃণমূল নেতা শ্যামল মণ্ডল বলেন,  ব্লক সভাপতির সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। আমাদের গুরুত্ব না দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে দল চালাচ্ছে। আমরা তাই পদত্যাগ করেছি। দল ছাড়ছি কিনা সময় আসলে বলব। দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই পদত্যাগ।


যদিও এই সব ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মালদার তৃণমূল কংগ্রেসের কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকার বলেন, কেউ কেউ দাদার অনুগামী আছেন, এতদিন তাঁরা যে অপকর্ম করেছেন, দাদার নামে ধামাচাপা দেওয়া ছিল। এরা গেলেই মঙ্গল। এদিকে দলত্যাগী ও পদত্যাগী নেতাদের স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। মালদার সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, দলবদল শুরু হয়েছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, তৃণমূলে কেউ থাকবে না। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখাবে।