নয়াদিল্লি: ২০১৭-র উন্নাও ধর্ষণ মামলায় দোষী ঘোষিত বহিষ্কৃত উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বাকি জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণা করল আদালত। সেঙ্গারের ধর্ষণের শিকার নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা দিতেও নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির বিশেষ আদালত। জেলা বিচারক ধর্মেশ শর্মা সাজা ঘোষণার সময় নমনীয়তা দেখানোর আবেদন নাকচ করে বলেছেন, আদালত মেয়েটির দুর্দশা, কষ্ট লাঘব হওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করছে না। সেঙ্গার জনতার সেবক, প্রতিনিধি ছিলেন, কিন্তু তাঁদের আস্থা, বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছেন। সেঙ্গার ধর্ষিতাকে ভীত, সন্ত্রস্ত করার মতো আচরণ করেছেন বলেও জানিয়েছে আদালত।
বাড়তি ক্ষতিপূরণ হিসাবে নির্যাতিতার মাকেও ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ ঘোষণা করেছে আদালত। সিবিআইয়ের পাশাপাশি নির্যাতিতার কৌঁসুলিও বলেন, ধর্ষিতার পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিত। সেঙ্গারের কৌঁসুলি সওয়াল করেন, তাঁর মক্কেলের অতীত অপরাধের রেকর্ড নেই বলে ন্যূনতম সাজা অর্থাত ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হোক।
তিস হাজারি আদালত সিবিআইকে আরও নির্দেশ দিয়েছে নির্যাতিতার জীবনের ঝুঁকির মাত্রা খতিয়ে দেখে তাঁর ও তাঁর পরিবারকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে হবে, তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
২০১৭য় নাবালিকা ধর্ষণ, অপহরণ মামলায় সেঙ্গার দোষী ঘোষিত হওয়ার পরদিন মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা স্থগিত রাখে আদালত।
সেঙ্গারকে নাবালক যৌন নির্যাতন রোধ আইনের (পকসো) ৫ (সি), ৬ ধারায় ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। প্রমাণাভাবে সংশয়ের ভিত্তিতে রেহাই দেওয়া হয়েছে এই মামলায় তাঁর সহ-অভিযুক্ত শশী সিংহকে।
নির্যাতিতাকে কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, স্থির করতে গত সোমবারই সেঙ্গারের নির্বাচনী হলফনামার প্রতিলিপি চায় আদালত। সেখানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণের উল্লেখ রয়েছে।
মঙ্গলবার সিবিআইয়ের কৌঁসুলি অশোক ভারতেন্দু আদালতে বলেছিলেন, এটা আসলে সিস্টেমের বিরুদ্ধে একটি মানুষের লড়াই। সমাজের ওপর এ ধরনের অপরাধের যে প্রভাব পড়ে এবং লোকজনের মানসিকতা মাথায় রেখে এই মামলায় দোষীর সর্বোচ্চ সাজা হওয়া কাম্য।


সেঙ্গার নির্যাতিতাকে ২০১৭-র ৪ জুন ধর্ষণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ১৭। ২০১৮-র ৩ এপ্রিল মেয়েটির বাবাকে বেআইনি অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ। ৯ এপ্রিল বিচারবিভাগীয় হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ২৮ জুলাই নির্যাতিতা, তার দুই আত্মীয়া ও তাঁদের আইনজীবী যে গাড়িতে চেপে যাচ্ছিলেন, তাতে ধাক্কা মারে একটি চলন্ত ট্রাক। দুই আত্মীয়া মারা যান, নির্যাতিতা ও আইনজীবী মারাত্মক জখম হন।