ওয়াশিংটন: নোভেল করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে এবার অবস্থান পাল্টে ফেলল আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা CIA. পশুপাখিদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায় বলে এর আগে জানিয়েছিল তারা। কিন্তু শনিবার প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিনের ল্যাবরেটরি থেকে কোনও রকমে ওই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। নতুন কোনও অনুসন্ধানের রিপোর্ট নয়, বরং জো বাইডেন সরকারের প্রাক্তন CIA ডিরেক্টরের নির্দেশে তৈরি পুরনো একটি রিপোর্ট সামনে আনা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প CIA-র প্রধান হিসেবে জন ব়্যাটক্লিফকে নিযুক্ত করেছেন। তাঁর নির্দেশেই ‘গোপন’ রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন। (US COVID-19 Report)


ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সমস্ত তথ্য়প্রমাণ দেখে CIA মনে করছে, প্রাকৃতিক ভাবে ভাইরাস ছড়ায়নি। বরং ভাইরাস ছড়ায় কোনও ল্যাবরেটরি থেকে। কিন্তু এই রিপোর্ট নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ল্যাবরেটরি থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে যে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে, তার সপক্ষে প্রমাণে ঘাটতি রয়েছে, চূড়ান্ত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় এবং কিছু তথ্যপ্রমাণ পরস্পর বিরোধী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। চিনের ল্যাবরেটরি থেকে ভুলবশত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, না কি প্রাকৃতিক ভাবে সেটি ছড়িয়ে পড়ে, তা নিয়ে ধন্দ ছিল আগের রিপোর্টে। (CIA COVID Report)


ট্রাম্প ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরই হঠাৎ কেন পুরনো ফাইল সামনে আনা হল, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে এই নয়া রিপোর্টেও নির্দিষ্ট কোনও উত্তর নেই। বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিতর্কের অবসান কোনও দিনই হবে না। চিনের তরফেও এ নিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে না সেভাবে। তবে COVID-19 ভাইরাসের উৎপত্তি জানতে এখনও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে CIA. প্রাকৃতিক ভাবে ভাইরাস ছড়ায়, না কি ল্যাবরেটরি থেকে ছড়িয়ে পড়ে, দুই দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে অতিমারি পরিস্থিতিতে বিশ্বের অর্থনীতি থমকে যায়, লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, তার উৎপত্তি জানতে লাগাতার CIA-র উপর চাপ দিয়ে চলেছেন আমেরিকার সেনেটররাও। 


অতিমারির সঙ্কট কেটে গেলেও, এখনও তার ফল ভুগতে হচ্ছে বিশ্বকে। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতেও তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। সেই আবহে নতুন করে ট্রাম্প সরকার চিনের বিরুদ্ধে ফাইল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, কূটনৈতিক সংঘাত জোরাল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও আরকানসাসের রিপাবলিকান সেনেটর টম কটনের দাবি, চিনের ল্যাবরেটরি থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে। এখনও পর্যন্ত সেটিকেই বিশ্বাসযোগ্য তত্ত্ব বলে মনে হয়েছে তাঁর। পৃথিবীতে বিপর্যয় নামিয়ে আনার জন্য চিনকে এর ফল মূল্য চোকাতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। 


চিন যদিও যাবতীয় জল্পনা খারিজ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই তাদের নিশানা করা হচ্ছে।  আমেরিকায় চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গু বলেন, “ভাইরাসের উৎস নিয়ে এই রাজনীতি এবং চিনকে কলঙ্কিত করার চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। সকলের কাছে অনুরোধ, বিজ্ঞানকে সম্মান করুন, ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব থেকে দূরে থাকুন।”


প্রথম COVID-19 সংক্রমণের যে ঘটনা ধরা পড়ে, তা ছিল ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। চিনের উহানের মাংসের বাজার থেকে প্রথম বার সংক্রমণ ছড়ায় বলে জানা যায়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হলে উহানের ল্যাবরেটরির প্রসঙ্গ উঠে আসে। দু’বছর আগে আমেরিকা যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তাতে বলা হয়, উহান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলেও, এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু মেলেনি। ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরতেই নতুন করে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে।