দেহরাদূণ: একটি করে দিন এগোচ্ছিল যত, ততই সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন অনেকে। তবে সব বিপদ এড়িয়ে, শেষ মেশ উত্তরাখণ্ডের ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গের মধ্যে থেকে ৪১ জন শ্রমিককে বের করে আনা গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এক এক করে সুড়ঙ্গ থেকে তোলা হয় শ্রমিকদের। দীর্ঘ ১৭ দিন পর অন্ধকার কাটিয়ে আলোর দেখা পেলেন তাঁরা। কিন্তু যে সুড়ঙ্গ ভেঙে বিপত্তি, সেটির নির্মাণ করছিল কারা, উঠছে প্রশ্ন। কারণ সুড়ঙ্গ নির্মাণ করতে গিয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানা হয়নি বলে অভিযোগ সামনে আসছে। (Uttarakhand Tunnel Collapse)


উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় জাতীয় সড়কের উপর যে সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গ ভেঙে বিপত্তি ঘটে, সেটির ২৬০ মিটার ভিতরে আটকে ছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। গত ১২ নভেম্বর ভোরে সুড়ঙ্গটি ভেঙে পড়ে। তার পর থেকে টানা ১৭ দিন সুড়ঙ্গে আটকে ছিলেন শ্রমিকরা। শেষ মেশ মঙ্গলবার রাতে নিরাপদে বের করে আনা গেল সকলকে। আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। বাকিরা ছিলেন ভিন্ রাজ্য থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক। পেটের টানে সেখানে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন সকলে। (Uttarkashi Tunnel Collapse)


ভেঙে পড়া ওই সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গটি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘চার ধাম’ প্রকল্পের অন্তর্গত। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু, যার আওতায় কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, যমুনোত্রী এবং গঙ্গোত্রীর সংযুক্তিকরণ চলছে সড়কপথের মাধ্যমে। সেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটাতে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের ৮৮৯ কিলোমিটার জায়গা শনাক্ত করা হয়। এর আওতায় কোথাও পাহাড় কেটে রাস্তা, সুড়ঙ্গপথ, বাইপাস, এমনকি উড়ালপুলও গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যার মধ্যে এই সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গপথটিও শামিল।


আরও পড়ুন: Uttarakhand Tunnel Collapse: স্পর্শকাতর পরিবেশে যথেচ্ছ নির্মাণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, উত্তরাখণ্ডে একের পর এক বিপর্যয়ে উঠছে প্রশ্ন


গত ১৭ দিন ধরে উদ্ধারকার্য চালাতে সরকারি প্রচেষ্টার কথা বার বার উঠে এলেও, নির্মাণের বরাত পাওয়া সংস্থার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা থেকে গিয়েছে আড়ালে। ওই সুড়ঙ্গপথটি নির্মাণের বরাত পেয়েছিল ‘নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’। হায়দরাবাদের সংস্থাটি ২০০৮ সালে গ্রিনফিল্ড কৃষ্ণপত্তনম গভীর সমুদ্র বন্দরটিরও নির্মাণ করে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছে তারা।


এ বছরের গোড়াতেই মুম্বই এবং নাগপুরের মধ্যে তৈরি হওয়া সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ চলাকালীন ক্রেন ভেঙে পড়ে। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ২০ জন শ্রমিকের। ‘নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’ই সেখানে কাজ করছিল। ২০২২ সালে সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হলে, সেটির উদ্বোধন করেন মোদি। তৃতীয় পর্যায়ের কাজ করছিল ওই সংস্থা। সংস্থার সাব-কন্ট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে সেই নিয়ে মামলা দায়ের হয়।


২০১৯ সালে জগনমোহন রেড্ডি ক্ষমতায় আসার পর ওই সংস্থার একাধিক দফতরে হানা দেয় আয়কর বিভাগ। শোনা যায়, কৃষ্ণপত্তনম বন্দরটির বরাত পাওয়ার চেষ্টা করেছিল আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু সেই সময় তেলুগু দেশম পার্টির সরকারের শাসন থাকাকালীন প্রকল্পের বরাত পায় ‘নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ‘নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’-এর বরাত পাওয়া বন্দরে আদানি গোষ্ঠীকে ৭৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব কেনার অনুমোদন দেয়। ২০২১ সালে বাকি ২৫ শতাংশও আদানি গোষ্ঠীর হাতে ওঠে।


এর পর উত্তরাখণ্ডের সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গপথ তৈরির বরাত পায় ‘নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’। ২০২২ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা লাগাতার পিছিয়ে যায়। পাশাপাশি ঋষিকেষ- কর্ণপ্রয়াগ রেল পথের বরাতও পায় ‘নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’। কিন্তু হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের উত্তরাখণ্ড যেখানে প্রাকৃতিক ভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সেখানে নির্মাণের ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ মানা হয়নি বলে অভিযোগ।