নয়াদিল্লি :লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়েছিল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। শনিবার সই করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আইনে পরিণত হল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। বুধবার বিলটি পেশ করা হয়েছিল লোকসভায়। সুদীর্ঘ আলোচনার পর তা পাশ হয় সংসদের নিম্নকক্ষে। তারপর দিন বিলটি পেশ করা হয়েছিল রাজ্যসভায়। সেখানেও প্রায় ১২ ঘণ্টা আলোচনা হয় এই বিলটি অনুমোদিত হয় । রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতি পাওয়ার পর শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হয়েছে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫। পিটিআই সূত্রে খবর, ওয়াকফ (সংশোধন) আইন, ২০২৫, ৫ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেয়েছে।
কেন ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন?
কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে সার্বিক ভাবে মুসলিমদের উন্নতি হবে। ক্ষমতায়ন হবে মুসলিম মহিলাদের। কেন্দ্রের যুক্তি, এর ফলে সার্বিক ভাবে মুসলিমদের উন্নতি হবে। মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসে ‘হস্তক্ষেপ’ করবে না নতুন আইন। ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে অস্বচ্ছতা দূর হবে। মুসলিম মহিলাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির দিশা দেখাবে। মুসলিম ছাত্রীদের বৃত্তি, মহিলাদের স্বাস্থ্য ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা, দক্ষতা বৃদ্ধি, মহিলা উদ্যোগীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের রাস্তা খুলে দেবে নতুন আইন।দরিদ্রদের জীবনযাপনের মান উন্নত করবে। দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা ৪.৯ লক্ষ থেকে বেড়ে ৮.৭২ লক্ষ হয়েছে। এই পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি সঠিক ভাবে পরিচালিত হলে শুধু মুসলমানদের জীবনকেই উন্নত হবে না, সমগ্র দেশের ভাগ্যও বদলে দেবে।
কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, এর আইন ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতাকে খর্ব করে মুসলিমদের অধিকার হরণ করবে। শুক্রবার পার্ক সার্কাসে বিলের প্রতিবাদে সরব হয় জয়েন্ট ফোরাম অফ ওয়াকফ প্রোটেকশন। শনিবার বিক্ষোভকারীরা পার্ক সার্কাস মোড়ে ব্যারিকেড সরিয়ে দিলে বাধা দেয় পুলিশ। বিক্ষোভ সভায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতা খিলাফত কমিটির চেয়ারম্যান মন্ত্রী জাভেদ খান সহ অনেকে।
ওয়াকফ কী
মুসলিম আইনে যে স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি দলিলের মাধ্যমে ধর্মীয় বা দাতব্য় উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয় তাই হল 'ওয়াকফ'। এই সম্পত্তিকে বলে 'ওয়াকফ সম্পত্তি'। যা মূলত সেবামূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। এই সম্পত্তি কখনও হস্তান্তর করা যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবর, মসজিদ এবং দরিদ্রদের আশ্রয় দেওয়ার মতো কল্যাণকর কাজে মূলত ব্যবহার করা হয় ওয়াকফের জমি।এই ওয়াকফ সম্পত্তি দেখভাল করে 'ওয়াকফ বোর্ড' । এতদিন ওয়াকফ আইন ১৯৯৫-এর ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে 'ওয়াকফ' হিসাবে ঘোষণার অধিকার ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। কিন্তু নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে। সংশোধিত বিলে আরও বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত না নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিতর্কিত সম্পত্তি ওয়াকফের নয়, সরকারি সম্পত্তি হিসেব গণ্য হবে।
লোকসভা ও রাজ্যসভায় দীর্ঘ আলোচনা
বুধবার সুদীর্ঘ আলোচনার পর লোকসভায় বিলটি পাশ হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বিলটি পেশ করা হয়েছিল সংসদের উচ্চকক্ষে। সেখানেও প্রায় ১২ ঘণ্টা আলোচনার পর তা অনুমোদিত হয়।বিলটির পক্ষে ১২৮টি এবং বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়ে রাজ্যসভায়। বিলটি অনুমোদন পেতে রাত ২ টো বেজে যায়।