কেরালা: ক্রমেই লম্বা হচ্ছে মৃ্ত্যুমিছিল। ওয়েনাডে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছুঁইছুঁই। ১৩ বছর আগের সতর্কবাণীতে কান না দেওয়ার ফলেই কি এই বিপর্যয়? উঠছে প্রশ্ন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদল বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
কাদা মাটিতে ডুবে গিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। খেলনার মতো ভেসে গেছে বাড়ি, গাড়ি। নিশ্চিহ্ন রাস্তা, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ। তছনছ হয়ে গেছে ছবির মতো ওয়েনাড। সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের ভূমিধসের ঘটনায় ঘুমের মধ্যে জলকাদায় ডুবে শিশু ও মহিলাসহ প্রাণ হারিয়েছেন ২০০-র বেশি মানুষ। আহতর সংখ্যা ২০০-র বেশি। এখনও নিখোঁজ অনেকে। ঘরবাড়ির পাশাপাশি, ধসের জেরে গায়েব হয়ে গেছে আস্ত রাস্তা, তার জায়গায় বইছে নদী।
কেন এই বিপর্যয়?
এই রকম পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ চালানোই সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা, NDRF-এর কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসার জন্য কলেজ ও চার্চগুলিতে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতাল।
সেখানে চিকিৎসা চলছে আহতদের। কিন্তু কেন এমন পরিণতি হল কেরলের? ১৩ বছর আগের সতর্কবাণীতে কান না দেওয়ার ফলেই এই ধ্বংসলীলা চালাল প্রকৃতি? রাজ্য সরকারের হালকা মনোভাবের কারণেই কি জীবন দিয়ে মাশুল গুণলেন ২০০-র বেশি মানুষ? এই সব প্রশ্ন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, দ্য ওয়েস্টার্ন ঘাটস ইকোলজি এক্সপার্ট প্যানেলের প্রধান মাধব গ্যাডগিল ২০১১ সালের অগাস্ট মাসে প্রশাসনের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেন। সেখানে বলা হয়, মুণ্ডাক্কাই, চুড়ালমালা, আত্তামালা এবং নুলপুঝা গ্রামগুলি খুবই স্পর্শকাতর। এই সব গ্রামে কোনও রকম খননকাজ করা যাবে না।
দুর্ঘটনার জেরে মঙ্গলবার এই গ্রামগুলিই কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতা ভি মুরলীধরনের দাবি, ২০২০ সালে এবিষয়ে সতর্ক করেছিল কেরালা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটিও। ৪ হাজার পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বিজেপির অভিযোগ, কোনও কথায় কান না দেওয়াতেই এই বিপর্যয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার সর্বদল বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এদিকে, এদিন বোন প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে ওয়েনাডে পৌঁছন এলাকার সদ্য প্রাক্তন সাংসদ ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী। ঘুরে দেখেন এলাকা। কথা বলেন দুর্গতদের সঙ্গে। তিনি বলেন, "এই সময় সব রকম পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে। এখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন। তাঁদের চিকিৎসা দরকার। এই মুহূর্তে আমি রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত নই,এই মুহূর্তে আমি ওয়েনাডের মানুষকে নিয়ে চিন্তিত। আমার মনে পড়ছে, যখন বাবাকে হারিয়েছিলাম, আমার মনের কী অবস্থা হয়েছিল। এখানকার মানুষ শুধু বাবাকে হারায়নি। তারা পুরো পরিবারকে হারিয়েছে। ভাই, বোন, বাবা, মা - পুরো পরিবার। আমি বুঝতে পারছি, আমার যা মনের অবস্থা হয়েছিল, এদের অবস্থা তার থেকে অনেক খারাপ।''
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা-কে চিঠি লিখে ওয়েনাডের ধসকে 'ভয়ঙ্কর বিপর্যয়' চিহ্নিত করে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। দুর্গত কেরলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এরই মধ্যে মৌসম ভবন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওয়েনাড় এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Darjeeling: পাহাড় কেটে বেআইনি নির্মাণ, টানেল তৈরি; ধসের প্রবণতা বাড়ছে দার্জিলিং, কালিম্পঙে