রাজা চট্টোপাধ্যায়, উমেশ তামাং ও মোহন প্রসাদ, দার্জিলিং: ওয়েনাডের বীভৎস প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি ভয় ধরাচ্ছে এ রাজ্যের পাহাড়ের বাসিন্দাদের। যত্রতত্র পাহাড় কেটে বেআইনি নির্মাণ থেকে পাহাড় কেটে টানেল তৈরি, হাইড্রোপ্রজেক্ট-এসবের জেরে ক্রমশ ধসের প্রবণতা বাড়ছে দার্জিলিং, কালিম্পঙে। এখন সেখানে কী পরিস্থিতি? বিষেশজ্ঞরা কী বলছেন?
ধসের প্রবণতা বাড়ছে: কখনও মেঘভাঙা বৃষ্টিতে হড়পা বান। আবার কখনও আচমকা ধস। পাহাড়ের ওপর থেকে বুলেটের গতিতে কাদা-পাথর নেমে আসা। কেরল থেকে উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ-হাড় হিম করা এই ছবিগুলোর জেরেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অঞ্চল দার্জিলিং ও কালিম্পঙের বাসিন্দারা। একসময় তিস্তার ধারেই বাড়ি ছিল কালিম্পংয়ের বাসিন্দা কিশোর প্রধানের। গত বছরের ৪ অক্টোবর হড়পা বানে সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। "আমাদের ভয় আরও বাড়ছে এখন। আমরা টিভিতে দেখছি কেরলের ওয়েনাডে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে, একশোর থেকে বেশি মানুষ মারা গেছে। চার ঘণ্টার মধ্যে তিনটে ধস নেমেছে। সেটা দেখে আমাদের ভয় আরও বেড়ে গেছে। আমরা তিস্তার ধারে আছি। দু'দিকে উপত্যকা। একদিকে কালিম্পং অন্যদিকে দার্জিলিং। গ্যাংটক সিকিমে অনেক হাইড্রোপ্রজেক্ট আছে।কেরলের মতো বৃষ্টি হলে আমাদের অবস্থা কী হবে? কালিম্পং কী হবে, রাস্তাঘাট কী হবে? আমরা এখন ভয়ে কাপছি।''
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হল পাহাড়ের গায়ে যত্রতত্র অপরিকল্পিতবাবে বেআইনি নির্মাণ। ইংরেজ আমলে পাহাড়ে বেশিরভাগ নির্মাণই ছিল কাঠের। এখন সেই জায়গা নিয়েছে কংক্রিট। অভিযোগ, যার জেরে বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে পাহাড়ের। ওই এলাকার বাসিন্দা গণেশ প্রধান বলেন, "প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। বাড়ি তৈরি হচ্ছে। নদী আছে আমরা সেটা বন্ধ করে বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। সেইজন্য এটা এরকমভাবে এটা আবারও হবে। অনেক নদী, ছোট ছোট জলশায় বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষরা তারওপরেই বাড়ি বানাচ্ছে। জলের রাস্তা ব্লক করলে তো নিশ্চয়ই ধস নামবে।''
তিস্তা ও তার শাখানদীর ওপর গত কয়েক দশকে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। কৃত্রিমভাবে জলের ধারা আটকে দেওয়ার ফলে তার চাপ বেড়ে যাচ্ছে। উন্নয়নও চাই, আবার প্রকৃতির ভারসাম্য় বিগড়োলেও ক্ষতি। এই পরিস্থিতির মধ্য়েই পাহাড় কেটে চলছে রেলের টানেল তৈরির কাজ। সোমবার দার্জিলিংয়ের ঘুমে পাইপলাইনের কাজ চলার সময়ও আচমকা ধসে একজনের মৃত্যুও হয়েছে। ইতিমধ্যে দার্জিলিং ও কালিম্পঙের একাধিক এলাকাকে ধসপ্রবণ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু তারপরেও অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠছে। জিটিএ-র পিআরও সুভাষ প্রধান বলেন, "সরকার এত করে সাবধান করার পরেও ঘর তৈরি করছে। সরকার আগেই ধসপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে তারপরেও জবরদস্তি ঘরবাড়ি তৈরি করে বসে যাচ্ছেন। প্ল্যানেরও অনুমোদন দেওয়া হয়নি, কোনও সুযোগসুবিধাও দেওয়া হয়নি। তারপর কোনও ধস বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হওয়ার পরে সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের দোষ দিয়ে তো কোনও লাভ নেই।''
পাহাড়ের উন্নয়ন প্রয়োজন অবশ্যই, কিন্তু সেই উন্নয়নের বিপুল ভার সামলানোর জমিটি যথেষ্ট শক্তপোক্ত কি না, সেটা দেখে নেওয়াও একই রকম জরুরি। বলছেন পরিবেশবিদরা।
নইলে প্রকৃতি রুষ্ট হলে কিন্তু সমূহ বিপদ। সাধের দার্জিলিংকে কীভাবে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব? সেভ দ্য হিলসের সভাপতি প্রফুল্ল রাও বলেন, "আমাদের নজর দেওয়া উচিত নর্দমাগুলো যাতে পরিষ্কার থাকে। হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টিপাতের জেরে যে জল জমে সেই জলকে আমাদের তাড়াতাড়ি বের করে দিতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্রিটিশরা যে নিকাশির ব্যবস্থা করে গেছিল সেটাই রয়ে গেছে। সেটা আর উন্নত হয়নি, উল্টে আমরা আরও খারাপ করেছি। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের গাছ লাগাতে হবে।''
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: জীবন ও স্বাস্থ্য বিমা থেকে GST প্রত্যাহারের দাবি, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি মমতার