দীপক ঘোষ ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, শ্রীরামপুর: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। মনের কথা বলতে পারছিলাম না। বিজেপিতে যোগ দিয়ে মন্তব্য পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়রের। তিক্ততা ভুলে জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে কাজ করার বার্তা দিলেন বাবুল সুপ্রিয়। যদিও জিতেন্দ্রর দলত্যাগ নিয়ে তাচ্ছিল্যের সুর তৃণমূলের গলায়।
Jitendra Tiwari Joins BJP: BJP-তে যোগ জিতেন্দ্র তিওয়ারির
রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু হয় না...আরও একবার প্রমাণ করলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। মাস তিনেক ধরে যাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রতি মুহূর্তে তৈরি হয়েছে জল্পনা, সেই জিতন্দ্র তিওয়ারি অবশেষে যোগ দিলেন বিজেপিতে। ডিসেম্বর থেকে বারবার ডিগবাজি খাওয়া জিতেন্দ্র মঙ্গলবার শ্রীরামপুরে বিজেপির সভায় দিলীপ ঘোষের হাত থেকে তুলে নিলেন বিজেপির পতাকা। জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতেই, আগে যে বাবুল সুপ্রিয় প্রকাশ্যেই আপত্তি জানিয়েছিলেন, সেই তাঁর গলার সুরও এখনও নরম। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘উনি এলে দল স্ট্রং হবে, স্বাগত জানিয়েছি, যে ইচ্ছে দেখিয়েছেন, আসানসোলের বড় নেতা, মোদির নেতৃত্বে কাজ করতে চাইলে পুরনো বৈরিতা ভুলে স্বাগত জানাচ্ছি, আমার সঙ্গে জিতেন্দ্রর অনেকদিন কথা হয়েছে, অনেক সাহসের সঙ্গে চিঠিটা লিখেছিলেন, স্ট্রং ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন স্বাগত জানাচ্ছি ৷’’
এদিন বিকেলে ইঙ্গিতপূর্ণ ট্যুইট করেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ লেখেন, যদি কেউ অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিতে চান, তাহলে তাঁকে নরেন্দ্র মোদির আদর্শ এবং নেতৃত্বে মানুষের জন্য কাজ করার তীব্র ইচ্ছা থাকতে হবে। তাঁকে তৃণমূল স্তর থেকে নেতৃত্বে পৌঁছনোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ ও বিশ্বাসের মন্ত্রে এগোতে হবে। রাজনৈতিক কারণে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আসানসোল পুরসভাকে বঞ্চিত করেছে। এই অভিযোগে পুরমন্ত্রীকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে ডিসেম্বরে চিঠি দেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এরপরই গত বছর ১৭ ডিসেম্বরে একে একে পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূল জেলা সভাপতি ও আসানসোলের পুর প্রশাসকের পদ ছেড়ে দল ছাড়ার ঘোষণাও করেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কলকাতার নেতারা চান না আমি দলে থাকি....আমি দল ছাড়লাম ৷’’
দলত্যাগের পরই বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা বাড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে যান পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। কিন্তু, তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, এই আঁচ করে এর বিরোধিতা করে কড়া মন্তব্য করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়, অগ্নিমিত্রা পাল, সায়ন্তন বসু। মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা তীব্র হলেও, শেষপর্যন্ত তা হয়নি। আর দলত্যাগের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর বদলে তৃণমূলেই আছেন বলে জানান জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
কিন্তু, তৃণমূলে ফিরলেও, পুরনো জায়গা আর ফিরে পাননি আসানসোলের দাপুটে নেতা জিতেন্দ্র। দলের অধিকাংশ কর্মসূচিতেই ডাক পাননি জিতেন্দ্র তিওয়ারি। পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূলের নতুন কমিটিতেই জায়গা হয়নি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের। আসানসোলের পুর প্রশাসক ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদেও তাঁকে ফেরানো হয়নি। এমনকি তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের কোঅর্ডিনেটর করা হয় পাশের কেন্দ্রের বিধায়ককে ৷ শেষমেষ জিতেন্দ্র তিওয়ারি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিলেন। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘যারা গেছেন বা যাচ্ছেন তাঁদের আঙুল চুষতে হবে বলে দিতে পারি ৷ তাই যে যায় যাক, মমতার মুখ জনতার আস্থা, সেটাই আসল ৷’’ জিতেন্দ্র তিওয়ারি যোগ দেওয়ায় বিজেপির কোনও লাভ হয় কি না, তার উত্তর মিলবে ভোটেই।