অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয় শ্রীরাম বলার প্রতিবাদে পথে নামলেন কবির সুমন। এদিন লেক মলের সামনে ও গড়িয়াহাট মোড়ে দাঁড়িয়ে একক প্রতিবাদ করেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ।

কবির সুমন জানিয়েছেন, সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি মাননীয়াকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অসম্মানের প্রতিবাদ করতেই পথে নেমেছেন তিনি।  পাশাপাশি, তিনি যে বিজেপি-আরএসএস-এর ভাবধারার বিরোধী, তাও ফের একবার স্পষ্ট করে দেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ। অন্যদিকে ভিক্টোরিয়া কাণ্ড দিয়ে সোচ্চার হয়েছেন  তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করা উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর। এদিন কুলতলিতে সভায় দাঁড়িয়ে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, নেতাজিকে অপমান করার জবাব মানুষ দেবে।

তবে শুধু কলকাতার বুকেই নয়। এদিন জেলায় জেলায় প্রতিবাদে পথে নামে তৃণমূল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী অসম্মান করার অভিযোগ এনে জেলায় জেলায় পথে শাসক দল। বীরভূমের দুবরাজপুরে বাইক মিছিল করেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা। লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের মেটে গ্রামে এই মিছিলের আয়োজন করা হয়। আজ সকালে দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা। এদিন হুগলির বৈদ্যবাটিতে মিছিল হয়। বৈদ্যবাটি-শেওড়াফুলি শহর অধিবাসীবৃন্দের নামে ওই ধিক্কার মিছিলে অংশ নেন পুরসভার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলররা। ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাও। মিছিল শেষে রাজ্যে অশুভ শক্তিকে বিনাশের যজ্ঞও করেন তাঁরা।

ঘটনা কী?

গতকাল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য পেশ করার জন্য মঞ্চে উঠতেই দর্শকাসন থেকে ভেসে আসে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। এই স্লোগান থামানোর অনুরোধ করেন আয়োজকরা। কিন্তু এই স্লোগানে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এভাবে অপমান করা যায় না। এটা রাজনৈতিক নয়, সরকারি অনুষ্ঠান। সরকারি অনুষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান নয়। কলকাতায় এই অনুষ্ঠান করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি মন্ত্রককে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু প্রতিবাদ জানিয়ে আমি বক্তব্য রাখছি না।’ এরপর ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে নিজের আসনে গিয়ে বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী।

এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। কেউ জয় হিন্দ বলছিলেন, কেউ বন্দেমারতম, আবার জয় শ্রী রাম স্লোগানও দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে এই স্লোগানে আপত্তির কী তা বোধগম্য নয়। বিজয়বর্গীয় বলেছেন, মমতার আগে থেকেই অ্যাজেন্ডা ছিল। তিনি মঞ্চের অপব্যবহার করে কিছু সংখ্যক মানুষকে খুশি করতে চেয়েছেন। ভারতে রাম-রাম বলে একে অপরকে অভিবাদন করা হয়। শ্রী রামের নাম নেওয়ায় কারুর আপত্তি করা উচিত নয়।