হিন্দোল দে, কলকাতা:  স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখানোর পরেও একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানোর অভিযোগ! শেষপর্যন্ত পকেটের টাকা খরচ করে বেসরকারি নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি করতে হল অসহায় পরিবারকে। যদিও এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


পেশায় কলমিস্ত্রি আনন্দপুর থানার নোনাডাঙার বাসিন্দা প্রদীপ দাস। রবিবার একটি বাড়িতে কাজ করার সময় তিনতলার ওপর থেকে পড়ে যান বছর ৪৮-এর এই ব্যক্তি। মাথা, হাত ও পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর। আহতের মেয়ে পিঙ্কি মণ্ডল জানান, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কোথাও ভর্তি নিল না। কার্ডের ভরসায় বসে থাকলে বাবাকে আর বাচানো যাবে না ৷’’ মুখ্যমন্ত্রী থেকে তৃণমূলের তাবড় তাবড় নেতা-ভোটের মুখে যখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে রাজ্যবাসীকে আশ্বাস দিচ্ছেন, তখন খাস কলকাতাতেই উঠল রোগী ফেরানোর অভিযোগ! পিঙ্কি মণ্ডলের অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কোনও কাজ হয়নি।


আহতের পরিবার জানিয়েছে, প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে।  অভিযোগ, সেখানে প্রাথমিক চিকিত্‍সা হলেও, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখানোর পর ভর্তি নেওয়া হয়নি! এখানেই শেষ নয়। আহতের পরিবারের অভিযোগ, একাধিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকা এই ব্যক্তিকে ভর্তি নেওয়া হয়নি।  বেহালার আরও একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখানোর পরও ভর্তি নেয়নি কোনও হাসপাতালই! আহতের মেয়ের কথায়, ‘এর মধ্যে একটি হাসপাতালে তো অ্যাম্বুল্যান্স থেকে রোগীকে নামালোই না ওরা !’


স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে সেই রোগীর চিকিত্‍সা করতে হবে বলে বারবার হুঁশিয়ারি শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। কিন্তু এরপরেও কেন রোগীকে ভর্তি নেওয়া হল না? বেসরকারি এক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও তাদের হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আসেনি। প্রসেসিং চলছে। পাশের হাসপাতাল বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। অন্য একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এরকম কোনও ঘটনার কথা তাদের জানা নেই। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে তাদের হাসপাতালে চিকিত্‍সা করা হয়।


বেড খালি না থাকায় এই ব্যক্তিকে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে সাফাই দিয়েছে বেহালার এক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ‘‘ওঁরা এসেছিলেন। কিন্তু আমাদের এখানে বেড খালি নেই। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৮০ জন চিকিত্‍সা করছেন। বেড খালি বলে নিতে পারিনি।’’ বর্তমানে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিত্‍সাধীন রয়েছেন আহত ব্যক্তি। তবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে নয়, তাঁর চিকিত্‍সার যাবতীয় ভার বহন করতে হচ্ছে পরিবারকেই।