অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: রাজ্যে বিধানসভা ভোট সামনেই। নির্বাচন সামনে রেখে আসাদুদ্দিন ওয়েসির মিমের পা রাখার চেষ্টার পরই তুঙ্গে উঠেছে তরজা। ওয়েসি দেশজুড়ে বিভিন্ন সময়ে বাঙালিদের উপর নিপীড়ন নিয়ে কেন কিছু বলেন না, প্রশ্ন তুলে রাজনীতি করার চেষ্টা করা হলে তীব্র বিরোধিতা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিল দি বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন।
বঙ্গ নির্বাচনেই সংখ্যালঘু ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে ডান-বাম সব দলই ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটকে পাখির চোখ করছে। শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। এই পরিস্থিতিতে রবিবার বাংলায় এসে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকে সামনে রেখে ভোটে লড়ার কথা জানিয়েছেন হায়দরাবাদের দল মিমের সভাপতি ওয়েসি। বলেছেন, আব্বাসকে সামনে রেখেই এগব। উনি যেদিকে দিক নির্দেশ করবেন, সেদিকেই যাব। আগেই বলেছি বাংলায় আসছি।
কিন্তু ওয়েসি বাংলায় পা রাখার চেষ্টা করলেও তাঁর রাজনীতির ধরণের সঙ্গে মোটেও একমত নয় বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া পরিষ্কার বলেছেন, রাজনীতি করার চেষ্টা করলে আমরা তার তীব্র বিরোধী। ওয়েসি যখন দেশ জুড়ে বিভিন্ন সময়ে বাঙালিদের উপর নিপীড়ন হয় তখন কেন কথা বলেন না? কেন তিনি বাঙালিদের স্বার্থের কথা বলতে পারেন না? বসিরহাট দরগার পীরজাদা খোবায়েব আমিনের প্রশ্ন, যেখানে বিজেপি কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যকে টার্গেট করে, সেখানেই কেন পৌঁছে যান ওয়েসি, মিম? এখানেও তিনি এসেছেন ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দিতে। আমরা এর বিরোধিতা করছি।

পাল্টা জবাব দিয়েছেন আব্বাস, যাঁর হাত ধরে বাংলায় পা রাখার স্বপ্ন দেখছেন ওয়েসি। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা বলেছেন, আমি কোনও ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনীতি করিনি। একজন অতিথি আমার বাড়িতে এসেছেন ফুরফুরা শরিফে। ইতিপূর্বে কংগ্রেস এসেছে, তখন ধর্মীয় সুড়সুড়ি হয়নি? বামফ্রন্ট এসেছে , ধর্মীয় সুড়সুড়ি হয়নি? মমতা ব্যানার্জি ঘরে ঘরে ঘুরেছে, তখন ধর্মীয় সুড়সুড়ি হয় না? কখনও যদি বিজেপি আসে তাহলে কি আমি তাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দেব! এটা কোন মানবিকতা?

২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক মূলত ছিল বাম-কংগ্রেসের পক্ষে। তারপর এর সিংহভাগই চলে আসে তৃণমূলের দিকে। এই পরিস্থিতিতে আব্বাস ও ওয়েসি সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসালে কার ক্ষতি, কার লাভ? ভোটের সময় ইমাম অ্যাসোসিয়েশেন কোন দিকে যেতে পারে? বাম-কংগ্রেস জোটের দিকে? না কি অন্য পক্ষে? এ ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত না দিয়ে ধন্দ জিইয়ে রেখে ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া বলেছেন, প্রয়োজনে রাজনীতির ময়দানে নামব!

রাজ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা তিনটি। মালদা, মুর্শিদাবাদ, এবং উত্তর দিনাজপুর। এছাড়াও দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম, হাওড়া, নদিয়া এবং দুই ২৪ পরগনার একাধিক গ্রামীণ বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম জনসংখ্যা এতটাই বেশি, যে তারা চাইলে ভোটে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। রাজ্যে অন্তত ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে মুসলিম ভোটাররা। আরও ৩০ থেকে ৩৫টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটাররা নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে।