কলকাতা : আজ ভোর ৬ টা থেকে রাজ্যজুড়ে জারি হয়ে যাচ্ছে লকডাউনের নিয়মের একাধিক কড়াকড়ি। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে নিয়ম জারি থাকবে ৩০ মে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত যা বলবৎ থাকবে। ঠিক কী কী কড়াকড়ি হচ্ছে একঝলকে সেটাই একবার দেখে নিন, সঙ্গে চোখ বুলিয়ে নিন এবারে রাজ্যের লকডাউনে কড়াকড়ি ঠিক কীভাবে ধাপে ধাপে এগিয়েছে।


গোটা দেশের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও প্রবল প্রভাব ফেলেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। কোভিডের চোখ রাঙানির বিরুদ্ধে লড়তে গত ৩০ এপ্রিল প্রথম আংশিক লকডাউনের নিয়ম রাজ্যজুড়ে বলবৎ করা হয়েছিল। বাজারের সময় কমানো, রেস্তোরাঁ, বার, শপিং মল বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। জরুরী সমস্ত পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া ও বেশ কিছু দোকান খোলা রাখা হয়েছিল।


গত ৫ মে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথ নেওয়ার পর নবান্নে প্রথম সাংবাদিক বেঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পক্ষ থেকে আংশিক লকডাউন আরও কড়া করার কথা বলেছিলেন। সেদিনই তিনি জানিয়েছিলেন সামনের কয়েকটা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সতর্ক থাকার বার্তাও দিয়েছিলেন।


রাজ্যের পক্ষে লোকাল ট্রেন বন্ধ করা হলেও বাস-মেট্রো, অফিস ইত্যাদি অল্প সংখ্যায় চালানো চলছিল। কিন্তু সেই পথে এগিয়েও সংক্রমণের রেখা এখনও নিম্নগামী না হওয়াতেই বাধ্য হয়েই লকডাউনে আরও কড়াকড়ির পথে হাঁটতে হল বলেই রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে। এবারের কড়াকড়িতে বদলগুলো দেখে নেওয়া যাক-



  • লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি বাস, মেট্রো, ফেরি সহ সমস্ত গণ পরিবহন আগামী এক পক্ষকাল বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে। জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ও অনলাইন ডেলিভারীর সঙ্গে যুক্ত হলে তবেই যাতায়াতের ছাড়পত্র থাকছে। তবে সেক্ষেত্রেও লাগবে ই-পাস।

  • রাত ৯টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত একান্ত জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা ছাড়া মানুষ বা যানবাহনের চলাচলে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। 

  • সমস্ত স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা ছাড়া সমস্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। 

  • আংশিক লকডাউনের মতোই শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বার, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, জিম, সুইমিং পুল বন্ধই থাকছে। পাশাপাশি পার্ক, চিড়িয়াখানা, অভয়ারণ্যও বন্ধ থাকবে।

  • বাজারের সময়েও করা হয়েছে পরিবর্তন। আংশিক লকডাউনে সকালের পাশাপাশি বিকেলেও কয়েক ঘণ্টার জন্য বাজার-হাট খোলা হচ্ছিল। আজ থেকে শুধুমাত্র সকাল ৭টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বাজার-হাট খোলা থাকবে।

  • পাশাপাশি আনাজ, মুদিখানা, মাংসের দোকান, ডিমের দোকান, পাউরুটি ও দুধের দোকানও আগামী ১৫ দিন সকালের এই তিন ঘণ্টার (৭টা থেকে ১০টা) জন্যই খোলা থাকবে।

  • মিষ্টির দোকান খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। গহনার দোকান দুপুর ১২টা তেকে ৩ টে পর্যন্ত।

  • ওষুধের দোকান ও চশমার দোকান অবশ্য কড়াকড়ির আওতার বাইরে। এইধরণের দোকানগুলি সারাদিন খোলা থাকবে।

  • হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, টিকা নেওয়ার জন্য, বিমানবন্দর ও সংবাদমাধ্যম প্রয়োজন ছাড়া প্রাইবেট গাড়ি, অটো-রিক্সা চলবে না আগামী ১৫ দিনের জন্য।

  • খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী ছাড়া রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না কোনও গাড়ি।

  • সমস্ত ধরণের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা।

  • ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে চা-বাগান ও ৩০ শতাংশ কর্মী নিয়ে জুট-মিল চালাতে হবে।

  • ই-কমার্স ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে লকডাউনের কড়াকড়ি প্রযোজ্য নয়। 

  • ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে সকাল ১০ টা থেকে ২ টো পর্যন্ত। এটিএম লকডাউনের কড়াকড়ির বাইরে।

  • পেট্রোল পাম্প, গাড়ি সারানোর দোকান, গ্যাসের দোকান লকডাউনের কড়াকড়ির বাইরে।

  • বিয়েতে সর্বোচ্চ ৫০ জন আমন্ত্রিত। সৎকারে সর্বোচ্চ ২০ জনকে থাকার ছাড়পত্র।


রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বিস্তারিতভাবে সব বলার পর তাঁর সই করা বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। যেখানে সাফ বলা হয়েছে, আগামী এক পক্ষকাল কোনওভাবে কড়াকড়ি না মানলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে নেওয়া হবে কঠোরতম পদক্ষেপ।