জাকার্তা: জন্ম আফগানিস্তানের চরম রক্ষণশীল সমাজে। নব্বইয়ে বাবা মার হাত ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে কোনওরকমে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া পাকিস্তানের কোয়েটায়। আর সেখানেই ক্যারাটের সঙ্গে মীনা আসাদির প্রথম সাক্ষাৎ। যে সমাজে মেয়েদের বাড়ি থেকে বার হওয়াই ভাল চোখে দেখা হয় না, সেখানেই ছোট্ট মীনা শিখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ক্যারাটের মত শারীরিক স্পর্শনির্ভর খেলা। ১৩ বছর বয়সে নিজেই গিয়ে এক কোচের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, পুরুষ শিক্ষার্থীদের থেকে দূরে ঘরের এক কোনে শুরু হয় তাঁর ক্যারাটে পাঠ। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা জেতার পর ২০১০-এ সাফ গেমসে ৩টি ব্রোঞ্জ মেডেল জেতেন তিনি। কিন্তু কেরিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও এক মহিলার রান্নাঘরের বদলে ক্যারাটে ম্যাটে থাকা পাক সমাজ ভালভাবে নেয়নি। উৎসাহ দেওয়া তো দূরের কথা, তাঁর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। এমনকী মহিলার ক্যারাটে শেখার বিরোধিতা করেন তাঁর সিনিয়র কোচও।


অন্য কেউ হলে ধিক্কারে হয়তো কেরিয়ার ছেড়েই দিতেন। কিন্তু মীনা অন্য ধাতুতে তৈরি। ক্যারাটে ছাড়ার বদলে ফের দেশ ছাড়েন তিনি। এবার জন্মভূমি আফগানিস্তান। জাতীয় দলে জায়গা পান, নানা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন। আর্থিকভাবে সক্ষম হওয়ার জন্য তখন থেকেই শুরু করেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিতে।

(সৌজন্যে ফেসবুক)

কিন্তু এবারেও মীনা বিষ নজরে পড়েন মুসলিম মৌলবাদীদের। ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে ট্রেনিং দেওয়া চলবে না বলে ফতোয়া জারি করে তারা। মীনা আলাদা করে ট্রেনিং দেওয়ার কথা বললে তারা নতুন দাবি করে, সেন্টারই বন্ধ করে দিতে হবে। তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও শুরু হয়। শেষে তাঁকে নির্বাসনে যেতে বলে তালিবানরা। এই মুহূর্তে মীনা থাকেন ইন্দোনেশিয়ায়, উদ্বাস্তু ও দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়েদের ক্যারাটে কোচিং দেন তাঁর দ্য সিসারুয়া রিফিউজি লার্নিং সেন্টারে। এখানে তাঁর ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৯০-এর মত, বাইরে অনেকে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায়।

(সৌজন্যে ফেসবুক)

জীবনকে মীনা দেখেছেন ক্যারাটে ম্যাটের মত করে। একের পর এক প্রবল প্রতিপক্ষকে মাত করে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের জায়গা খুঁজে পাওয়ার নিরন্তর লড়াই। আর এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন মুসলিম বিশ্বে নারী স্বাধীনতার প্রথম সারির মুখ, নিজের রাস্তা যিনি বার করেছেন কিক ও পাঞ্চের মাধ্যমে।