এক যুগের সম্পর্ক। দশ বছর লিভ ইন আর দু’বছরের বিয়ে। রূপকথার সেই ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’য় পূর্ণচ্ছেদ। ব্র্যাড পিট আর অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে একসঙ্গে ব্র্যাঞ্জেলিনা বলতে পছন্দ করতেন ভক্তকুল। তবে আজ বিনোদন সংক্রান্ত একটি মার্কিন ওয়েবসাইট মারফত এই খবর চাউর হতেই বাগরুদ্ধ সেই ভক্তরা। ।
তাঁদের হতাশ করে ৪১ বছরের অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেত্রী সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেনের এক কোর্টে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানিয়েছেন। জোলির দাবি, ব্র্যাড পিটের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বিচ্ছেদ ছাড়া আর উপায় ছিল না। ছয় ছেলেমেয়ের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ব্র্যাড পিট অবশ্য তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
কিন্তু এই দীর্ঘ সম্পর্কে কেন দাড়ি টানতে চাইলেন ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ?’ মার্কিন ওই ওয়েবসাইটের দাবি, বাচ্চাদের বড় করার ক্ষেত্রে পিটের আচার-আচরণ দেখে ইদানীং অসম্ভব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জোলি। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাদক সেবন এবং মদ্যপানের জেরে পিট ঘনঘন রেগে যেতেন। তাতেও বিরক্ত হতেন জোলি। তাঁর বক্তব্য, সেই রাগের প্রভাব পড়ত ছেলেমেয়েদের উপরে। সেটা একেবারেই কাম্য বলে মনে হয়নি জোলির। দুই তারকার ঘনিষ্ঠরা অবশ্য এই খবরে খুব বিচলিত নন। কারণ গত কয়েক মাস ধরেই ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’র মধ্যে সমস্যা হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। তবে কোনও তৃতীয় ব্যক্তি নয়, সমস্যাটা যে ব্র্যাড আর অ্যাঞ্জেলিনার মধ্যেই তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না।
আগে দু’বার বিয়ে ভেঙেছে জোলির। ২০০৫-এ জেনিফার অ্যানিস্টনের সঙ্গে পাঁচ বছরের দাম্পত্য শেষ করে জোলির হাত ধরেছিলেন ব্র্যাড। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’-এর শ্যুটিং থেকেই প্রেমের শুরু। তার পর দীর্ঘ দশ বছর নানা চড়াই উৎরাই দেখেছে ব্র্যাঞ্জেলিনা। ২০১৪ সালে বিয়ের সিদ্ধান্ত। সেই বিয়ে নিয়েও জোর চর্চা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। বিয়ের আগের বছর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে ডবল ম্যাসটেকটমি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন জোলি। একটি মার্কিন দৈনিকে তাই নিয়ে প্রবন্ধ লিখে পৃথিবীব্যাপী মহিলাদের সাহস জুগিয়েছিলেন। বিয়ের পরে ২০১৫ সালে ফের আরও একটি অস্ত্রোপচার। এ বারও ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে ওভারি বাদ দেন তিনি। এই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। ফের মার্কিন দৈনিকে তিনি প্রবন্ধ লিখে জানান, অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতার কথা। নিজের ছেলেমেয়েদের বড় করার ক্ষেত্রে জীবন যেন কোনও বাধা তৈরি না করে— তাই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব ঝুঁকি থেকে আগাম সতর্কতা নিতে চেয়েছেন বলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন হলিউডের এই অভিনেত্রী।
দুই অস্ত্রোপচারের ধাক্কা শরীরেও প্রভাব ফেলেছিল অনেকটাই। সেই সময়ে ক্ষীণতনু, অসুস্থ জোলির ছবি দেখে সরব ছিল সোশ্যাল মিডিয়াও। কিন্তু সঙ্কটের প্রতিটি মুহূর্তেই পাশে পেয়েছেন দীর্ঘ দিনের সঙ্গী ব্র্যাডকে। সমর্থন-আশ্বাস-ভরসা দিয়ে সাহসিনী জোলিকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন ব্র্যাড। শুধু নিজের সন্তান নয়, আফগানিস্তান, সুদান, সিরিয়ার শরণার্থী শিশুদের কাছেও যখন-তখন ছুটে গিয়েছেন জোলি। যে কাজের সূত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জে শরণার্থী সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে বেছে নেওয়া হয় জোলিকে। তাঁর এই সব সফরেও কখনও সখনও পা মিলিয়েছেন ব্র্যাড। তৈরি করেছেন জোলি-পিট ফাউন্ডেশন। কিন্তু ঘনিষ্ঠদের মতে, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে সব বন্ধন।
অদ্ভুত ভাবে গত বছরই ‘বাই দ্য সি’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা। সেখানে পিটের বিপরীতে অভিনয়ও করেন তিনি। এক দম্পতির বিয়ে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা নিয়ে গল্পটা। ছবি শেষ হওয়ার পরে জোলি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের বিয়েটাই আর একটু হলে ভাঙতে বসেছিল ‘বাই দ্য সি।’ তবে ছবিটা করতে গিয়ে আমরা যেন নিজেদের পরীক্ষা নিজেরাই নিয়েছি। মনে হয়েছিল, এটা যদি পার করতে পারি, আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। আমরা পেরেছি। আমরা দু’জনেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পছন্দ করি। যদিও এই ছবিটা আমাদের জন্য একটু বিপজ্জনক ছিল! তবে আর এমন পরীক্ষার ইচ্ছে নেই।’’ কিন্তু শেষ রক্ষা হল কই!