নয়াদিল্লি: কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ  করার ক্ষেত্রে ফের বাধার প্রাচীর তুলেছে চিন। রাষ্ট্রপুঞ্জে মাসুদকে নিষিদ্ধ করার জন্য ভারতের আর্জি ফের আটকে গিয়েছে চিনের আপত্তিতে। চিন ছাড়া রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪ দেশই মাসুদকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার পক্ষেই রয়েছে।কিন্তু চিনের বাগড়ায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতের উদ্যোগ আটকে গেল। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের মূল পাণ্ডাকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষিত করার আর্জি দ্বিতীয়বার আটকে দেওয়ার সাফাই গেয়ে চিন বলেছে, ভারতের আর্জি সম্পর্কে ‘ভিন্ন ভিন্ন মতামত’ রয়েছে। চিনের পদক্ষেপ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে বিষয়টি বিবেচনা করার ক্ষেত্রে আরও সময় দেবে ।

ভিটো প্রয়োগ করে চিন মাসুদকে নিষিদ্ধ করার আর্জিতে বাধা দেওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি বলেছে, চিনের এই পদক্ষেপ একটা বিপজ্জনক বার্তা।ভারতের এই সমালোচনার জবাবে চিনের বিদেশ মন্ত্রালয় বলেছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের ১২৬৭ কমিটিতে সদস্যদেশগুলির দ্বারা যে আর্জি জমা পড়েছে তা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবগুলির প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

নিরাপত্তা পরিষদের একমাত্র দেশ হিসেবে চিন ভারতের আর্জির আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু এই বাধার পক্ষে সাফাই হিসেবে তারা ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকার অজুহাত দিয়েছে।

সংবাদসংস্থা পিটিআই-য়ের প্রশ্নের উত্তরে চিন বলেছে, গত মার্চে ভারতের পেশ করা আর্জি সম্পর্কে এখনও ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। এক্ষেত্রে চিন যে টেকনিক্যাল হোল্ড প্রয়োগ করেছে, তাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি ও রাষ্ট্রপুঞ্জের সংশ্লিষ্ট কমিটিকে আরও আলোচনা সময় দেবে।

আরও আলাপ আলোচনার কথা বলে চিন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভারত ও চিনের সরাসরি আলোচনার দিকেই ইঙ্গিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদের যে কমিটিতে ভারত মাসুদকে নিষিদ্ধ করার আর্জি জানিয়েছে, সেই কমিটি ভারতের আর্জি মঞ্জুর করলে সারা বিশ্বেই মাসুদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। প্রকাশ্যে সে কোথাও যেতে পারবে না।

পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদকে ২০০১ সালেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। মুম্বইতে জঙ্গিহানার পর মাসুদ আজহারকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হয়। সে বারও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চিন।

চলতি বছরের প্রথমেই পঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হানার পিছনে জৈশ-এর যোগ থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরই, মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য জোরদার দাবি তোলে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের সংশ্লিষ্ট কমিটিতে বিষয়টি পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু গত এপ্রিলে চিন ভেটো প্রয়োগ করে মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ভারতীয় প্রস্তাব আটকে দেয়।

নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা স্বত্ত্বেও গত সপ্তাহেই ভারতের আর্জিতে দ্বিতীয়বার টেকনিক্যাল হোল্ড জারি করে চিন।

গোয়াতে আগামী ১৫-১৬ অক্টোবর ব্রিকস সম্মেলনে অবকাশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের বৈঠকে প্রসঙ্গটি উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।