বেজিং: পাকিস্তানের মাটি থেকে নিরাপদ জঙ্গি ঘাঁটি উচ্ছেদ করার জন্য আমেরিকা যখন চাপ বাড়িয়েই চলেছে, তখন আসরে নামল বন্ধু চিন। বেজিংয়ের বক্তব্য, পাকিস্তানের দিকে আমেরিকার আঙুল তোলা চলবে না। তালিবান, হক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে স্পষ্ট পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহেই পাকিস্তানকে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তা স্থগিত করেছে আমেরিকা। কিন্তু চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র লু কাং আজ মিডিয়াকে বলেন, চিন সবসময়ই কোনও বিশেষ দেশকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়ানোর বিরোধিতা করেছে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার দায় কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশের ঘাড়ে চাপানোও সমর্থন করি না আমরা।
পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থেই সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আস্তানা ভেঙে দেওয়া দরকার, এটা তাদের বোঝাতে চিন সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে হোয়াইট হাউসের এক কর্তা যে অভিমত জানিয়েছেন, সে প্রসঙ্গেই চিনা মুখপাত্রটি বলেন, আমরা বহুবার বলেছি, পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ দমনের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, স্বার্থত্যাগও করেছে। সব দেশের উচিত এর ওর দিকে আঙুল না তুলে পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতা শক্তিশালী করা। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রয়াসের পক্ষে তা ইতিবাচক নয়। ট্রাম্প নববর্ষের ট্যুইট বার্তায় অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছর ধরে আমেরিকা ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য দিলেও বিনিময়ে পাকিস্তান মিথ্যা, প্রতারণা ছাড়া কিছুই দেয়নি, উল্টে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। পাল্টা পাকিস্তানের হয়ে আসরে নামে চিন।
চিনা মিডিয়ার জল্পনা, ট্রাম্প পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার চেষ্টা বাড়ালে তারা আরও বেশি চিনের দিকে ঝুঁকে পড়বে। কারণ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর প্রকল্পের আওতায় বেজিং পাকিস্তানে একাধিক প্রকল্প চালাচ্ছে। চিনা মিডিয়া খবর দিয়েছে, পাকিস্তান ইরানের চাবাহার বন্দরের কাছেই জিওয়ানিতে সামরিক বেস গড়তে চিনকে সম্মতি দিতে পারে। চাবাহার বন্দর যৌথ উদ্যোগে গড়ে তুলছে ভারত, ইরান ও আফগানিস্তান। বালুচিস্তানে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে গোয়াদর বন্দর চিন তৈরি করছে, তার খুব কাছেই জিওয়ানি।
এদিকে পাকিস্তান তার মাটিতে সক্রিয় জঙ্গিদের সমর্থন করে যাওয়া পর্যন্ত তাদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ থাকবে, প্র্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণার জন্য ভারতকে দুষল সরকার পরিচালিত চিনা সংবাদপত্র দি গ্লোবাল টাইমস। তাদের সম্পাদকীয়র বক্তব্য, বেজিং মনে করছে যে, ভারতের সাম্প্রতিক বিদেশনীতি সংক্রান্ত উদ্যোগ শুধু তার নিজের স্বার্থেই, তার ফলে শুধু সংঘাতই হবে। সম্পাদকীয়তে আবেদন করা হয়েছে, এলাকার বৃহত্তর মঙ্গলের স্বার্থে কৌশলগত ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি বদল করুক নয়াদিল্লি।