বেজিং ও মালে: মালদ্বীপে ভারত সামরিক হস্তক্ষেপ করলে তার তীব্র বিরোধিতা করবে চিন। বেজিংয়ের দাবি, এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। যদিও, চিনের আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছেন দ্বীপরাষ্ট্রের নির্বাসিত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশীদ।


মালদ্বীপের বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় ভারতের সামরিক সাহায্য চেয়ে গতকাল কলম্বো থেকে আবেদন করেন মহম্মদ নাশীদ। প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা যে বিচারপতি ও রাজনৈতিক নেতাদজের বন্দি করে রেখেছেন, তাঁদের মুক্ত করার আবেদন করেন ভারতকে। সেই প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। এমনকী, সেনাবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে।


ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে চিন। এদিন বেজিংয়ের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শ্যুয়াং জানান, আন্তর্জাতিক মহলের উচিত মালদ্বীপের সার্বভৌমত্বকে মাথায় রেখে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা। তৃতীয় পক্ষের উচিত নয় এমন পদক্ষেপ নেওয়া যাতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। তাঁর মতে, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।


যদিও, চিনের এই আপত্তিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ নাশীদ। এদিন কলম্বো থেকে তিনি টুইটারে জানিয়ে দেন, ভারতের উচিত অবিলম্বে সামরিক প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। চিনের প্রস্তাবকে খারিজ করে তিনি জানান, আলোচনায় পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।


ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের হয়ে জোরাল সওয়াল করে নাশীদ এদিন বলেন, ভারত কখনই অন্য দেশ কব্জা করেনা। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৮৮ সালেও একইভাবে ভারত সামরিক সাহায্য করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর চলে গিয়েছিল। তাঁর দাবি, সকল মালদ্বীপবাসী অতীতেও ভারতের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছিল, আজও তাদের দিকেই তাকিয়ে।


গত সপ্তাহে ভারতীয় মহাসাগরে অবস্থিত এই নৈসর্গিক দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয় চরম রাজনৈতিক সঙ্কট। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সহ সকল ৯ রাজনৈতিক বন্দির অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট।


এর পাশাপাশি, ইয়ামিনের দলত্যাগী ১২ সাংসদের আসনও ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। আদালতের ওই রায়ের ফলে, ৮৫ আসন-বিশিষ্ট মালদ্বীপের সংসদে বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেত। ফলে,  ইয়ামিনের ইমপিচমেন্ট অবশ্যম্ভাবী হতো।


কিন্তু, প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। বলেন, উল্টে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট তার এক্তিয়ার-বহির্ভুত কাজ করছে। ইয়ামিনের দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মানা হবে না।


এরপরই, সোমবার দেশে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন। সেইসঙ্গে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আবদুল্লা সঈদ সহ ২ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয় আরেক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গায়ুমকে। এরপরই, চাপের মুখে গভীর রাতে আগের নির্দেশ প্রত্যাহার করে সুপ্রিম কোর্টের বাকি তিন বিচারপতি।