অসলো: এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল স্যান্টোস। দেশে টানা পাঁচ দশকের বেশি অশান্তির অবসানের লক্ষ্যে গত মাসে বামপন্থী গেরিলা গোষ্ঠী ফার্ক-এর প্রধান রডরিগো লন্ডনোর সঙ্গে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। কিন্তু প্রায় চার বছর ধরে আলোচনার পর হওয়া শান্তিচুক্তির বেশ কিছু শর্তে দেশবাসী সায় দেয়নি। ২৬ সেপ্টেম্বর সই হওয়া চুক্তিটি নিয়ে ২ অক্টোবর গণভোট হয়। তাতে সেটি খারিজ হয়ে যায়। চুক্তিতে রয়েছে, সবচেয়ে পুরানো ও বড় গেরিলা গোষ্ঠীটি মূলস্রোতে ফিরে রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রকাশ্যে আসবে। রেহাই পাবে সন্ত্রাসে জড়িত মার্কসবাদী বিদ্রোহীরা। কট্টর দক্ষিণপন্থীরা এর বিরুদ্ধে প্রবল প্রচার চালায়। তাতে সাড়া মেলে দেশবাসীর।


চুক্তি দেশবাসীর অনুমোদন না করায় কলম্বিয়ার ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়। কিন্তু অবিচলিত থাকেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর শান্তি গড়ার লক্ষ্যে অটল থাকার মনোভাবকে সম্মান জানাতেই শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁকে বেছে নেওয়া হল বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তাদের তরফে কমিটির চেয়ারওম্যান কেসি কুলম্যান ফাইভ বলেছেন, নিজের দেশে ৫০ বছরের বেশি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ অবসানে তাঁর দৃঢ় প্রয়াসের জন্য নোবেল কমিটি ২০১৬-র শান্তি পুরস্কার প্রেসিডেন্ট স্যান্টোসকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছে নোবেল পুরস্কার পর্যবেক্ষক মহল, যারা গণভোটে শান্তিচুক্তি বাতিল হওয়ায় ধরেই নিয়েছিলেন যে, নোবেল পুরস্কারের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে কলম্বিয়া। কমিটি বলেছে, কলম্বিয়া বর্তমানে চরম সঙ্কটে ডুবে যাওয়ার বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে শান্তি প্রয়াসে উত্সাহ দেওয়াই লক্ষ্য। আমাদের প্রত্যাশা, এর ফলে শান্তির লক্ষ্যে যাবতীয় শুভ প্রয়াস চাঙ্গা হবে। শান্তি প্রয়াসে যাঁরা ফারাক গড়ে দিতে পারেন, তাঁরা বল পাবেন। দশকের পর দশক বাদে শেষ পর্যন্ত কলম্বিয়ায় শান্তি ফিরবে।

ঘটনাচক্রে কলম্বিয়ায় দীর্ঘ অশান্তি, হিংসায় ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশ মানুষ নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ ৪৫ হাজারের বেশি। একদিকে বাম গেরিলা গোষ্ঠী, অন্যদিকে দক্ষিণপন্থী পার্লামেন্ট সদস্যরা, আবার ড্রাগ মাফিয়া গোষ্ঠী, নানা পক্ষের সংঘাতে রক্তাক্ত হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।