ঢাকা: অভিজাত গুলশন এলাকায় সেনা- জঙ্গি গুলির লড়াই শেষ। আক্রান্ত রেস্তোঁরা হলি আর্টিজান বেকারির সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স, ১০০-র ওপর কমান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে। রেস্তোঁরার ভেতরে তল্লাশি শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে, এখন দেখা হচ্ছে, আশপাশে কোথাও বেপাত্তা জঙ্গিরা গা ঢাকা দিয়েছে কিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ১৩জন পণবন্দিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে যৌথ বাহিনী, তবে বাঁচানো যায়নি কয়েকজনকে, খতম ৬ জঙ্গি। এক জঙ্গিকে জীবন্ত ধরেছে সেনা, ২জন গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি প্রশংসাযোগ্য কাজ করেছে বলে হাসিনা মন্তব্য করেছেন, যদিও সেনা- জঙ্গি লড়াইয়ের ছবি পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রচার করার জন্য স্থানীয় সংবাদসংস্থাগুলির সমালোচনা করেছেন তিনি।



জাপান সরকার জানিয়েছে, রেস্তোঁরায় জঙ্গি হামলায় এক জাপানি নাগরিক আহত হয়েছেন, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাঁর চোট বিপজ্জনক কিছু নয়। ঘটনার সময় ওই রেস্তোঁরায় আরও কয়েকজন জাপানি নাগরিক ছিলেন, তাঁরা কেমন আছেন এখনও জানা যায়নি। ঘটনার দায়স্বীকার করে নিহত বিদেশি পণবন্দিদের ছবি প্রকাশ করে আইএস, সূত্রের খবর, মৃত্যু হয়েছে ২ ইতালীয় কূটনীতিকেরও। যদিও স্থানীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দাবি, এর পিছনে দুই স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী আনসার আল ইসলাম ও জামাত উল মুজাহিদিনের হাত রয়েছে। আনসার আল কায়দার প্রতি আনুগত্য দেখায়, জামাতের দাবি, তারা আইএসের প্রতিনিধিত্ব করে। জানা গেছে, হামলার সময় জঙ্গিরা আল্লা হু আকবর বলে চিৎকার করছিল। বন্দিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ভারতীয় ছিলেন বলে খবর। তাঁরা কেমন অবস্থায় আছেন জানা যায়নি।



হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই রেস্তোঁরা ঘিরে ফেলে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ দল আরএবি। আসে সেনাও। রাতেই জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় যৌথবাহিনী। জবাবে জঙ্গিরা ভেতর থেকে চিৎকার করে আত্মসমর্পণের তিনটি শর্ত দেয়। সেগুলি হল-

১. একদিন আগে ডেমরা থেকে আটক জেএমবি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহকে মুক্তি দিতে হবে।

২. তাদের অর্থাৎ রেস্তোঁরায় হামলা চালানো জঙ্গিদের নিরাপদে বার হয়ে যেতে দিতে হবে।

৩. ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদের এই অভিযান। এই অভিযানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

এরপরই বন্দুকবাজদের সঙ্গে শুরু হয় বাহিনীর গুলির লড়াই। রেস্তোঁরা চত্বরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। গুলশন এলাকাটি রাজধানী ঢাকার অত্যন্ত অভিজাত এলাকা। একদিকে যেমন বিভিন্ন শপিং মল, মার্কেট কমপ্লেক্স, নামী সংস্থার দফতর, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই এলাকায় রয়েছে, তেমনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালীদের বসবাস এখানে। রয়েছে ৩৪টি দেশের দূতাবাস ও বিদেশি নাগরিকদের ক্লাব। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরেই গুলশন ১ নম্বর সেক্টরে রয়েছে ভারতীয় হাই কমিশন। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারতীয় দূতাবাসের সব কর্মীই সুরক্ষিত রয়েছেন। বাংলাদেশ জুড়ে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা, স্কুলকলেজ, অফিস কাছারি বন্ধ রাখা হয়েছে।