লন্ডন: আক্ষরিক অর্থেই রুদ্ধশ্বাস অস্ত্রোপচার। হৃৎপিন্ড বন্ধ রেখে ১৫ ঘন্টার ম্যারাথন জটিল অস্ত্রোপচার। জীবন রক্ষা পেল ৯ মাসের শিশুর। মৃত্যুঞ্জয়ী শিশুর নাম নাথন বায়রন। সে এখন চিকিত্সা বিজ্ঞানের সাফল্যের নিদর্শন।

নাথনের বুড়ো আঙুলের মাপের হৃৎপিন্ডে একটা বড় ফুটো ধরা পড়েছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা মেরামত করা না হলে অকালেই ঝরে যেত ওই ফুলের মতো শিশুটির জীবন। চিকিত্সকরা বলেছিলেন, ওই ফুটো মেরামত না হলে নাথন আর বড়জোর ছয় মাস বাঁচবে।

হাসিখুশি নাথনের হৃৎপিন্ডের ত্রুটি সারাতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকরা। নাথনের মা-বাবার নাম লেসলি কন্ডি এবং ডেভিড বায়রন। তাঁদের বলা হয়েছিল, অস্ত্রোপচারের জন্য ৭ ঘন্টা সময় লাগবে। কিন্তু বাস্তবে লাগল তার দ্বিগুণ সময়।

২৮ বছরের মা লেসলি এখন অনেকটাই স্বস্তিতে। কান্না ভেজা গলায় বলেছেন, ও জানতেই পারবে না যে, ওকে কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। ওর প্রাণশক্তি এতটাই যে এত অসুস্থতার পরও ওর মুখে হাসি কিন্তু লেগেই থাকে।

মৃত্যুর সঙ্গে ৯ মাসের নাথনের পাঞ্জা লড়ার ক্ষমতা অবাক করে দিয়েছে চিকিত্সকদেরও।

প্রায় জন্ম থেকেই অসুস্থ নাথন। সাড়ে তিন মাস বয়স থেকে সে বিরল হৃদরোগ-টেট্রালজি অব ফ্যালটের শিকার। এতে মহাধমনী ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে যায়। তখন থেকেই একটি জীবনদায়ী মেশিনের সাহায্যে রাখা হয়েছিল। ওই মেশিন যখনই সরিয়ে নেওয়া হত, তখনই নাথনের হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসের কাজ বন্ধ হয়ে যেত। অস্ত্রোপচারের সময় সেই মেশিনের সাহায্যেই বাইরে থেকে রক্ত চলাচলের ব্যবস্থা করে নাথনকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন চিকিত্সকরা।

এছাড়াও সংক্রমণের কারণে তার পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তার ব্রেনে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাও ছিল।

অস্ত্রোপচারের আগে নাথনের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত ১১ দিন পর মাতৃদিবসে সন্তানকে ফের কোলে নেওয়ার সুযোগ পান মা।

তিন মাস পর নাথনকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় বাবা-মাকে।

স্কটল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ারের বাসিন্দা লেসলি সেই চরম উত্কন্ঠার দিনগুলি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ছয়-সাত সপ্তাহ আমরা বুঝতে পারছিলাম না, এর শেষ কোথায়। শেষপর্যন্ত একটা সকালে ওকে একেবারেই অন্যরকম দেখলাম। ওর মুখে তখনও ভেন্টিলেটর লাগানো ছিল। কিন্তু তখনও হাসার চেষ্টা করছিল।