সৌমিক সাহা, লন্ডন: টেমসের পাড়ে উমার আরাধনা। লন্ডনে মুখোপাধ্যায় দম্পতির বনেদি বাড়ির পুজোয় উত্সবের উদযাপন। পুজো করেন বাড়ির কর্তা। ৪৩ বছর ধরে যে পুজো করে আসছেন তিনি। ক্যাসেটে বাজে ঢাক। দেশের পুজোর নস্টালজিয়া কোথাও যেন উঁকি দিয়ে যায় মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয়।
প্রবাসে বনেদি বাড়ির পুজো। টেমসের তীরে যেন উঠে এসেছে ব্যারাকপুর, কৈখালির সেই দুর্গাপুজোর স্মৃতিকথা। চিরন্তনী বনেদি বাড়ির পুজোর আবেগ, আনন্দ, লন্ডন প্রবাসেও ৪৩ বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছেন নির্মল ও কুমকুম মুখোপাধ্যায়। এ বড় কম কথা নয়।
দেশের মাটি ছেড়েছেন। তবে মন থেকে দেশকে ছাড়তে পেরেছেন কি? তাই তো ৪৩ বছর আগে লন্ডনের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন মুখোপাধ্যায় দম্পতি। আগে হলে পুজো হলেও এখন দেবী দুর্গার আরাধনা বাড়িতেই। নির্মল মুখোপাধ্যায়ই তাঁর বাড়ির পুজো করেন। প্রশিক্ষণও দেন পুরোহিতের।
আরও পড়ুন: উমার আরাধনায় এবারও নজর কেড়েছে নর্থ লন্ডনের প্রভাতী সঙ্ঘের পুজো
পুজো হয়ে সমস্ত আচার, রীতি নীতি মেনেই। আগে তো দেশ থেকে পুজোর জল, দশকর্মাও নিয়ে আসতেন মুখোপাধ্যায় দম্পতি। তবে দেশের পুজোর সময়ের সঙ্গে লন্ডনের সময় মেলে না, এই যা। কুমকুম মুখোপাধ্যায় বলেন, দেশের মতো পুজো করলেও দেশের টাইমে করতে পারি না। এখানকার চন্দ্র সূর্য অনুযায়ী পুজো করি। দেশ থেকে আগে জল নিয়ে আসতাম। শ্যামবাজারের দশকর্মা ভাণ্ডার থেকে দশকর্মা।
লন্ডনের বাড়িতে প্রথম পুজোর কথা মনে পড়লে আজও স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন বাড়ির কর্ত্রী। বললেন, তখন বাড়িতে দুটো ঘর ছিল। তখন কলাগাছ পাওয়া যেত না। ব্রিটিশ ওয়ারওয়েজের এক বন্ধু কলাগাছ এনে দিয়েছিল। প্রথমে ইলিন রোডে পুজো করি। তারপর লন্ডন রোড। ২০১১-য় চলে আসে এখানে। দুবছর ঘরে আটকে গেছি।
কুমকুম মুখোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি ব্যারাকপুরে। কৈখালিতে মুখোপাধ্যায় দম্পতি ফ্ল্যাটও কিনেছেন। তবে লন্ডনে বসেই দুর্গাপুজোয় যেন ফিরে যান স্মৃতির শহরে। টেপরেকর্ডার, ক্যাসেটের চল এখন ভারতেই নেই, তো ব্রিটেন। কিন্তু মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোয় লন্ডনে ঢাকের আওয়াজ শোনা যায় ক্যাসেট থেকেই।
আরও পড়ুন: সুদূর সুইত্জারল্যান্ডেও উমার আরাধনা, জুরিখের সুইস পুজো এবার পড়ল ১৮ বছরে
মা দুর্গা তার ছেলেপুলে নিয়ে ফি বছর হাজির হন লন্ডনে এক বাঙালির বাড়িতে। আর সেই বাড়িতে দেবীর আপ্যায়নের সঙ্গে মিশে থাকে আন্তরিকতাও।