হেলসিংবর্গ: আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। বাপের বাড়ি ফেরার পালা উমার। উৎসবের মেজাজে শহর থেকে জেলায়। কোথাও সাবেকিয়ানা, কোথাও থিমের বাহার। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, আলো ঝলমলে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনের অপেক্ষা। কোথাও আবার প্রতিমা আনার প্রস্তুতি। চলছে তোড়জোড়। এরই মধ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটাও। তবে এই আনন্দ উৎসবের হাওয়া বাংলাতেই সীমাবদ্ধ নেই। সুইডেনেও পুজোর (Durga Puja 2022) আনন্দ অটুট।
হেলসিংবার্গে তুঙ্গে পুজোর প্রস্তুতি: পুজো মানেই মিলনোৎসব। বাংলার প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। এই বাংলার মাটি থেকে কয়েকমাইল দূরের দক্ষিণ সুইডেনের হেলসিংবর্গেও তুঙ্গে প্রস্তুতি। এই নিয়ে ষষ্ঠ বর্ষে পুজোয় আয়োজন করছে বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি অফ সাউথ সুইডেনের পুজো। মেয়ের হাতে মায়ের আরাধনাকে সামনে রেখে এবছর আত্মজা রূপে আত্মপ্রকাশ করবে মা দুর্গা। পৌরহিত্যের দায়িত্বেও মহিলারাই। ২০১৭ সাল থেকে পুজোর আয়োজন করছেন উদ্যোক্তরা। বিলেতের সিংহভাগ পুজোই মূলত হয় সপ্তাহান্তে। এত দিন পর্যন্ত বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি অফ সাউথ সুইডেনের পুজোতেও ছিল তেমনই রীতি। কিন্তু এবছর সেই নিয়ম থেকে কিছুটা সরে দাঁড়িয়েছেন উদ্যোক্তারা। পঞ্জিকা মেনে এবছর বোধন থেকে বিসর্জন হবে উপকূলবর্তী এই শহরে।
রীতি মেনে পুজোর আয়োজন: বাংলার পুজো মানেই কেনাকাটার ধুম, কুমোরটুলির প্রস্তুতি থেকে আলোর রোশনাই, ঢাকের বোল। কিন্তু এসবের থেকে অনেকটাই দূরে হেলসিংবার্গের প্রবাসী বাঙালিরা। প্রতি বছর বাংলার পুজো দেখার সুযোগও হয় না। অথচ পুজোর দিনগুলিতে মনখারাপের সুর আরও বেশি করে কড়া নেড়ে যায়। কর্মব্যস্ত জীবন সামলে প্রথম উইকএন্ডেই পুজোর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এভাবে কেটেছে পাঁচটা বছর। কিন্তু এবছর তাতে ছেদ পড়তে চলেছে। পঞ্জিকা মেনেই প্রায় একই সময় পুজো শুরু হচ্ছে ইউরোপের এই শহরে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা যুধাজিৎ দাশগুপ্ত জানান, “প্রত্যেক বছর উইকএন্ড দেখেই পুজোর আয়োজন করা হত। কিন্তু তার পরিবর্তন করে এবার পঞ্জিকা মেনে কলকাতার মতোই আমরা পুজোর আয়োজন করেছি। এর একটা মূল কারণ হল, টিভিতে যখন কলকাতার পুজো দেখছি, তখন এখানে হয়ত আমাদের অফিসে কাজ করতে হচ্ছে। সেটাও একটি মন খারাপের বিষয়। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
দেখতে দেখতে ৬ বছর পার। প্রবাসের মাটিতে আজও একই রকম আবেদন ধরে রেখেছে উপকূলবর্তী শহর হেলসিংবার্গের পুজো। জাতি বর্ণ ধর্ম, ভেদ না রেখে বহু মানুষ এক ছাদের তলায় সামিল হন। চলতি বছর তাদের থিম আত্মজা। মা দুর্গাকে কন্যা এবং মাতৃরূপে বরণ করা হবে। মূলত এই পুজোর আয়োজন করেন মহিলারাই। বোধন, নবপত্রিকা স্নান, ভোগের আয়োজন, সন্ধ্যারতি থেকে সিঁদুর খেলা- মেয়ের হাতেই বরণ করে নেওয়া হয় মাকে। উদ্যোক্তাদের কথায়, এই পুজোর মূল আয়োজক মহিলারাই। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা পিঙ্কি রায় জানান, “এবছরই প্রথম থিম পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। থিম ‘আত্মজা’। মাকে আমরা কন্যা এবং মাতৃরূপে বরণ করব। পুজোর নেতৃত্বে রয়েছেন মহিলারাই। বাংলার পথ অনুসরণ করে পৌরহিত্যের দায়িত্বে থাকছেন অন্যতম সদস্য তিন মহিলা।’’ পৌরহিত্যের দায়িত্ব পেয়ে খুশি অন্যতম সদস্য সোমা কর্মকার, মধুমিতা দাশগুপ্ত, মহুয়া দেব। সোমা কর্মকার জানান, অফিস, বাড়ির কাজ সামলে একটা বিশেষ কাজের প্রস্তুতি। বিষয়টা বেশ রোমাঞ্চকর, একটু ভয়ের এবং অনেকটা ভাল লাগার।’’
সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে। তাই কোনও ঢাকা জায়গা, মূলত কমিউনিটি হলে এই পুজোর আয়োজন করা হয়। ২০১৭ সালে প্রতিমা বিমানে উড়িয়ে প্রতিমা আনা হয় বিরাটি থেকে। সেটা হল ফাইবারের মূর্তি। যা সহজে নষ্ট হয় না। এবছরও ওই মূর্তিকেই পুজো করছি। তবে এই পুজোর আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু নিয়ম মানতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশকে জানাতে হয়। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন করে অংশ নিতে হয় পুজোয়।