লাহৌর: সাত-বছরের মেয়েকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় উত্তাল পাকিস্তান। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার সোশ্যাল মিডিয়া। পুলিশি গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছে নিহতের পরিবার।
পাক পঞ্জাব প্রদেশের কসুর জেলায় গত সপ্তাহে মেয়েটিকে তার বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করা হয়। মঙ্গলবার, একটি আবর্জনা থেকে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৫ তারিখ, বাড়ির কাছে একটি ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিল মেয়েটি। তারপর থেকেই তার খোঁজ মিলছিল না। অভিযোগ, এক ‘সিরিয়াল কিলার’ মেয়েটিকে অপহরণ করে।
জেলার শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক জুলফিকার আহমেদ জানান, মেয়েটির বাবা-মা হজ করতে সৌদিতে রয়েছেন। মেয়েটি মাসির কাছে ছিল। পোস্ট-মর্টেমের রিপোর্টে স্পষ্ট, মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করার পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পাকিস্তান জুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। বিচারের দাবিতে মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। টানা দুদিন ধরে চলছে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
এদিন কসুরের শাসক পিএলএমএন দলের বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায় স্থানীয় জনতা। তাঁর দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালেও।
লাহৌরে উত্তেজিত জনতা ফিরোজপুর রোড দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে। রাওয়ালপিন্ডিতেও দীর্ঘক্ষণ রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদীরা। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধও হয়। জানা গিয়েছে, পুলিশের গুলিতে ২ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে।
শুধুমাত্র রাস্তায় নয়, ৭ বছরের মেয়ের নির্মম পরিণতির প্রতিবাদে সোচ্চার সোশ্যাল মিডিয়াও। পাকিস্তানি অভিনেতা মাহিরা খান ও আলি জাফর ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। বিচার দাবি করে তিনি বলেন, এধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা যতবার ঘটে, ততবার দেশও ব্যর্থ হয়।
https://twitter.com/TheMahiraKhan/status/951204341322600450
আলি বলেন, জীবনে এত ক্ষিপ্ত ও হতাশ হইনি। আমি চাই, জৈনাব বিচার পাক। বাবা-মা উমরাহতে গিয়েছেন, আর মেয়ের এই পরিণতি!
মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন নিহতের বাবা। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুলিশের ওপর। তিনি জানান, পুলিশ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে অপহরণের দিনই তাঁর মেয়ে উদ্ধার হত।
তিনি বলেন, মেয়ের জন্য যাঁরা বিচার চাইলেন, পুলিশ তাঁদের গুলি করে মারল। অথচ, আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না। তিনি জানান, পুলিশের ওপর তাঁর কোনও ভরসা নেই।
ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে সরকারকে স্বতঃপ্রণোদিত নোটিস পাঠিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি, মেয়েটির হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে সামরিক বাহিনী ও আইএসআই-কে নির্দেশ দিয়েছেন পাক সেনাপ্রধান।
প্রবল সমালোচনার মুখে হত্যাকারীদের খোঁজে ১ কোটি টাকা পুরস্কার মূল্য ঘোষণা করেছে পাক পঞ্জাব প্রশাসন। এছাড়া, ২ প্রতিবাদীকে গুলি করে মারার জন্য ৪ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যার মামলা রুজু করা হয়েছে।