ইসলামাবাদ: সঙ্কট কাটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু প্রকৃতির রোষে আরও ছিন্নভিনন্ অবস্থা পাকিস্তানের (Pakistan Floods)। লাগাতার ভারী বৃষ্টি এবং হড়পা বানে ডুবে বানভাসি দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১১৪০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে পৌঁছেছে প্রায় ৭৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় (ভারতীয় মুদ্রায়) (Pakistan Devastation)। এই ধাক্কা কাটিয়ে, আগের অবস্থায় ফিরে আসতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে, তাও যদি আন্তর্জাতিক মহল থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য এসে পৌঁছয়।
বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান, সাহায্যের আর্জি রাষ্ট্রপুঞ্জের
এখনও পর্যন্ত যে খতিয়ান মিলেছে, তাতে সিন্ধ প্রদেশের অবস্থায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। সেখানে ফসলের জমি একটিও বেঁচে নেই। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষ ২৭ হাজার ১৪৪টি গরু-বাছুর মারা গিয়েছে। এর মধ্যে বালুচিস্তানেই ৫ লক্ষ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। খাইবার-পাখতুনখোয়ায় ৮ হাজার ৭৭১, পঞ্জাব প্রদেশে ২৩ হাজার এবং সিন্ধে ১৫ হাজার গবাদি পশু মারা গিয়েছে। এর ফলে দুধ, দই, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য এবং মাংসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে গোটা দেশে। গবাদি পশুপালনের উপর পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে, অর্থাৎ ৮০ লক্ষ পরিবারের রোজগারের রাস্তা বন্ধ। সবমিলিয়ে দেশের ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্যুইটার বার্তায় তিনি লেখেন, ‘বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। পীড়িত পরিবার, আহত মানুষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে সমবেদনা জানাই। আশাকরি দ্রুত এই বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে দেশ।’
বন্যার জেরে উদ্ভুত এই বিপর্যয়ের জেরে পাকিস্তানে মূদ্রাস্ফীতিও ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। শাক-সব্জি, নিত্য প্রয়োজনের জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে। অর্থমন্ত্রী মিফতাহ্ ইসমাইল জানিয়েছেন, শাক-সব্জি এবং খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করার পরিকল্পনা চলছে। তিল, টমেটো, লঙ্কা, খারিফ শস্য এবং পেঁয়াজের জমির ৫০ শতাংশই জলের নীচে চলে গিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশের সরকার। এ ছাড়াও রাস্তা, সেতু, পরিকাঠামোর অধিকাংশই জলের নীচে চলে গিয়েছে। আবহবিদদের আশঙ্কা, বর্ষা শেষ হতে হতে দেশের এক তৃতীয়াংশ জলের নীচে চলে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে অর্থসাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৬ কোটি মার্কিন ডলার তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা। এ ছাড়াও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও তুরস্ক, চিন, কানাডা এবং কাতারে মতো দেশ অর্থসাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত দিল্লির কাছে সাহায্যের আর্জি এসে পৌঁছয়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে ট্যুইটারে সমবেদনা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি
এর আগে, ২০১০ সালে পাকিস্তানে এমনই ভয়াবহ বন্যা দেখা গিয়েছিল। সেবার ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। সেই সময় ভারতের তরফে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ভূমিকম্পের সময়ও পাকিস্তানের সাহায্যে এগিয়ে যায় ভারত।