প্যারিস:সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযান ফ্রান্সের। মধ্য মালিতে ফ্রান্সের বিমান হানায় মৃত্যু জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার ৫০ জনেরও বেশি জিহাদির। বুরকিনা ফাসো ও নাইজারের সীমান্ত একালার কাছে এই হানা চালানো হয়। এই দুটি এলাকাতেই  জঙ্গিদের মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারি বাহিনীকে। মালির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানিয়েছেন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি।
পার্লি বলেছেন, গত ৩০ অক্টোবর মালিতে বরখানে বাহিনী এক অভিযান চালিয়ে ৫০ জনের বেশি জিহাদিকে খতম করেছে এবং অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ফরাসি নেতৃত্বাধীন জিহাদি-বিরোধী অপারেশন বরখানের উল্লেখ করে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
পার্লি জানিয়েছেন, অভিযানে প্রায় ৩০ টি মোটরসাইকেল ধ্বংস হয়েছে।
পার্লি এর আগে নাইজারের প্রেসিডেন্ট মামামাদৌ ইসোউফোউ এবং নাইজেরিয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসোউফোউ কাটাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখান থেকে বামাকাও রওনা দেন। পার্লি জানিয়েছেন, তিনটি সীমান্ত এলাকায় প্রচুর সংখ্যায় মোটরসাইকেলের ভিড় দেখে অভিযান শুরু করা হয়।
ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, নজরদারি এড়াতে জিহাদিরা যখন পালিয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়, তখন ফরাসি বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালাতে দুটি মিরাজ যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন পাঠায়। এই অভিযানেই ৫০ জনেরও বেশি জঙ্গির মৃত্যু হয় বলে পার্লি জানিয়েছেন।
সামরিক মুখপাত্র কর্নেল ফ্রেডারিক বারব্রি বলেছেন, চার জঙ্গি ধরা পড়েছে। তিনি বলেছেন, বিস্ফোরক ও একটি সুইসাইড ভেস্ট পাওয়া গিয়েছে। ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর ওই অঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল বলেও তিনি দাবি করেছেন।
বারব্রি জানিয়েছেন, গ্রেটার সাহারায় ইসলামিক স্টেস্টকে নিশানা করে ৩,০০০ সেনার সাহায্যে আরও একটি অভিযান চলছে। প্রায় একমাস আগে এই অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী দিনে এর ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
মালির অভিযানে আনসারুল ইসলাম গোষ্ঠী চরম ধাক্কা খেয়েছে বলে পার্লির দাবি। এই গোষ্ঠী আইইয়াদ আগ ঘালির নেতৃত্বাধীন জিএসআইএম অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে আল কায়দার সঙ্গে যুক্ত বলে পার্লি দাবি করেছেন।
গত জুমে মালিতে ফরাসি হানায় আল কায়দা কম্যান্ডার আব্দেলমালেক ড্রৌকডেলের মৃত্যুর পর ঘালি সাহেলে জিহাদিদের শীর্ষ নেতা হয়ে ওঠে। মালিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় ১৩ হাজার বাহিনী রয়েছে। সাহেল অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে ৫,১০০ ফরাসি বাহিনী।
২০১২ থেকেই জেহাদি উপদ্রব চলছে মালিতে। জঙ্গিদের হঠাতে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স ২০১৩-তে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। কিন্তু পরে লড়াই মধ্য মালি, প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো ও নাইজারেও ছড়িয়ে পড়ে। এরফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়েও পালিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
মালির একটি বিস্তীর্ন এলাকাই কার্যত সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অবিরাম সংঘাতের কারণে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোউবাকার বিরুদ্ধে গণ প্রতিবাদ শুরু হয় চলতি বছরে। পরে সামরিক অভ্যূত্থানে তাঁকে অগাস্টে ক্ষমতাচ্যূত হতে হয়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের আগে ১৮ মাস এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে। এই সরকার আলোচনায় আগ্রহী বলেই মনে হয়েছে।
গত মাসেই ইসমালিস্ট গোষ্ঠীর দ্বারা অপহৃত চারজনকে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হয় মালির অন্তর্বর্তী সরকার। এরমধ্যে ছিলেন ৭৫ বছরের এক ফরাসি পণবন্দি। প্রায় ২০০ বন্দির মুক্তির বিনিময়ে ছাড়া পান ওই চার অপহৃত।